থাইরয়েড কি? মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়?

প্রিয় পাঠক আপনি থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন কিন্তু থাইরয়েড কি, এর লক্ষন কি, মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় এবং এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ কিভাবে করবেন বুঝতে পারছেন না তো। তাহলে সমস্যা নাই থাইরয়েড কি এবং মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন ।
মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন । আশা করি আপনার সমস্যার সমাধান পাবেন ।

ভূমিকা

বর্তমান বিশ্বে থাইরয়েড নামক ব্যাধি ব্যাপক হারে বেড়েছে । পুরুষের থেকে নারীরা বেশি থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্ত । থাইরয়েড শরীরের এক বিশেষ গ্রন্থী । এটি আমাদের কন্ঠের দুপাশে থাকে । থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ হল শরীরে কিছু অত্যাবশ্যকীয় হরমোন উৎপাদন করা । থাইরয়েড হরমোনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে । 

এ নির্দিষ্ট মাত্রার কম হলে (হাইপার থাইরয়েডিজম ) এবং বেশি হলে (হাইপোথাইরয়েডিজম) হয়ে থাকে।যা মানুষের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে । বর্তমানে মেয়েদের এই থাইরয়েডর সমস্যা ব্যাপক হারে দেখা যায় । থাইরয়েড রোগের কারনে মেয়েদের শরীরে নানান ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে । নিম্নে মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় সেগুল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।

থাইরয়েড কি

থাইরয়েড একটি ছোট অন্তক্ষরা গ্রন্থি । যা গলার মাঝখানে প্রজাপতি আকারের ভয়েস বক্সের নিচে এবং শাসনালীর চারপাশে আবৃত । থাইরয়েড গ্রন্থি হরমোন তৈরির মাধ্যমে মানুষের দেহের প্রায় সকল বিপাকীয় প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে । গ্রন্থির মাঝখানে টিস্যুর একটি পাতলা অঞ্চল, যা ইস্টমাস নামে পরিচিত, প্রতিটি পাশ দুটি লবগুলিতে যোগ দেয় । 

থাইরয়েড রোগটিকে হরমোনজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের হরমন নিঃসরন হয়ে থাকে । তার মধ্যে থাইরয়েড নামক হরমন একটি । এই থাইরয়েড হরমন মানুষের শরীরে যখন কম নিঃসরন তখন ডাক্তারি ভাষায় তাকে হাইপথাইরয়েডিজম বলে । আর এই হরমন যখন প্রয়জনের থেকে বেশি নিঃসরন হয় তখন তাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলে । 

পুরুষের থেকে নারীরা বেশি এ রোগে আক্রানত হয় । তাই মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় এ সম্পর্কে জানা জরুরী।

থাইরয়েড কি কারনে হয়

থাইরয়েড মূলত আয়োডিনের অভাবে হয়ে থাকে । শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়োডিন না থাকলে এই থাইরয়েড রোগ হয় । থাইরয়েড গ্রন্থি আয়োডিন ব্যবহার করে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপাদন করে। যখন মানুষের শরীরে যতটুকু হরমোন প্রয়োজন তার থেকে বেশি বা কম হরমোন উৎপাদন করে নিঃসৃত হয় তখনই থাইরয়েড রোগের আবির্ভাব ঘটে ।

তাছাড়াও জেনেটিক কারনেও হয় যদি বাবা, মা, দাদা অথবা পূর্বপরুষের হয় । এছাড়াও গলার সার্জারি করা হলে এ ক্ষেত্রেও থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে । এই রোগ মানুষের অনিয়ম চলাফেরার কারনেও হয়ে থাকে । এসব কারণগুলো জানতে হলে মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে আগে জানতে হবে।

থাইরয়েড এর লক্ষণ

থাইরয়েড মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে যা বেশি নিঃসৃত হওয়ার কারণে হাইপার থাইরয়েডিজম এবং কম মিশ্রিত হওয়ার কারণে হাইপোথাইরোয়েডিজম হয়ে থাকে নিম্নে এগুলোর লক্ষণগুলো দেওয়া হলো ।
হাইপার থাইরয়েডিজম এর লক্ষণ গুলো হলোঃ
  • ওজন কমে যাওয়া ।
  • চোখ প্রসারিত হওয়া ।
  • অনিয়মিত ঘুম হওয়া ।
  • অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম অনুভুত হওয়া ।
  • অনিয়মিত মাসিক চক্র হওয়া ।
  • ঘাম বেড়ে যাওয়া ।
  • শরীরে কম্পনের সৃষ্টি হওয়া
  • অল্পতে ক্লান্তি অনুভব হওয়া ।
  • হার্ট স্পন্দন বেড়ে যাওয়া ।
  • অল্পতে নার্ভাস হয়ে যাওয়া ।
হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ গুলো হলোঃ
  • হঠাৎ করে ওজন বেড়ে যাওয়া ।
  • অল্পতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া ।
  • ত্বকের শুষ্কতা ।
  • ঠান্ডা অনুভব করা ।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া ।
  • ঘুম ঘুম ভাব অলসতা অনুভব হওয়া ।
  • পায়ের কিছুটা অংশ বা পুরো পা ফুলে যাওয়া ।
  • চুল পড়তে শুরু হওয়া ।
  • স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ।
  • পিরিয়ডের সমস্যা সৃষ্টি হওয়া ।
  • আরে জয়েন্টে ব্যথা অনুভূত হওয়া ।

মেয়েদের থাইরয়েড কেন হয়

বর্তমানে ডায়াবেটিসের মতো থাইরয়েড হরমোন এর সমস্যা ও বেশি দেখা দিচ্ছে । পুরুষের থেকে মেয়েদের সমস্যা বেশি হয় । থাইরয়েড সমস্যা মেয়েদের বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, মেয়েদের শারীরিক গঠন ,হরমোনের প্রভাব ,অর্গানিক মেটাবলিজম হ্রাস ,কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়া ,ইমোশনাল ও স্ট্রেস জনিত কারণ প্রভৃতি । 

আবার মেয়েদের এই থাইরয়েড রোগটি জেনেটিক লিংক এর কারণেও হয়ে থাকে । মেয়েদের এই থাইরয়েড সমস্যার কারণে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে । মেয়েদের শরীর অতিরিক্ত মোটা হলে এই রোগ হয়ে থাকে ।

মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়

মেয়েদের থাইরয়েডের সমস্যা হলে তার জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ে । মেয়েদের থাইরয়েড হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে । মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় নিম্নে সেগুলো দেওয়া হলঃ
  • এ রোগীরা মোটা হয়ে যায় ।
  • মাসিক অনিয়ন্ত্রিত হয় ।
  • চুল পড়ে যেতে থাকে ।
  • গলার স্ব র কর্কশ হয়ে যায় ।
  • গর্ভধারণের জটিলতা হয় ।
  • জয়েন্টে ব্যথা হয় ।
  • মেয়েদের মুখ, বুক, পেটে অতিরিক্ত লোম বা হার সুজিম হয় ।
  • বগলে ও ঘাড়ে কালো দাগ হয় ।
  • মুখে ব্রণ হয়ে থাকে ।
  • থাইরয়েড রোগী মেয়েদের পলিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম থাকে ।
  • রক্তে কোলেস্ট্রল বেড়ে যায় ।
  • শরীরে অনেক জ্বালাপোড়া করে ।
উপরিউক্ত এসব সমস্যাগুলোর কারণে মেয়েরা বিষন্নতায় ভুগে ।

মেয়েদের থাইরয়েড কমানোর উপায়

মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে না জানার কারণে মেয়েরা বুঝতে পারে না তাদের থাইরয়েড সমস্যা হয়েছে । তারা তাদের মুখে লোম, বাচ্চা না হওয়া ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায় । ডাক্তার তাদের কিছু টেস্ট দেয় যেমন: TSH,T3,T4,Vitamin D প্রভৃতি এই সব টেস্টের মাধ্যমে থাইরয়েড সমস্যা ধরা পরে । 

থাইরয়েড কমানোর মেন উপায় হল যাদের ওজন বেশি আছে তাদের ওজন কমানো । যার ওজন বেশি আছে তার ৫০ ভাগ ওজন কমাতে হবে শারীরিক ব্যায়াম ও খাবার নিয়ন্ত্রণ করে ।বাকি ৫০ ভাগ হচ্ছে ওষুধ সেবন করে । আবার যাদের হরমোন বেশি নিঃসৃত হয় তাদের ওজন কমতে থাকে। যারা দেখবে অকারণে ওজন দিন দিন কমতে আছে । 

তারা তৎক্ষণা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে ।এবং নিয়মিত লাইফস্টাইল অনুযায়ী চলতে হবে । আর হ্যাঁ প্রত্যেক ৫-৬ মাস পরপর এর টেস্টগুলো করে চিকিৎসা করতে হবে ।

থাইরইয়েড থেকে প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়

মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে জানার পরে থাইরয়েড থেকে প্রতিকার ও প্রতিরোধে উপায় জানতে হবে। জীবনযাত্রা ঠিক রাখা এবং কিছু খাদ্যাভ্যাস এর মাধ্যমে থাইরয়েড সমস্যা প্রতিরোধ করা যেতে পারে । মূলত আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড হয়ে থাকে । তাই প্রতিদিন পরিমাণ মতো আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। 

যেমন: দুধ, সামুদ্রিক মাছ, শাক-সবজি এবং মৌসুমী ফল এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন থাকে । থাইরয়েডকে প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে কার্বোহাইডেট কমিয়ে দিতে হবে যেমন: ডিম, পনির, মুরগির মাংস, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ইত্যাদি খেলে থাইরয়েড সমস্যা প্রতিরোধ করা যাবে ।

থাইরয়েড সমস্যা প্রতিকার ও প্রতিরোধ করতে হলে মানসিক চাপ কমিয়ে দিতে হবে এবং রাতে জাগার অভ্যাস ছেড়ে দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে । যেকোনো প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে ।প্রক্রিয়াজাত খাবারে অনেক রাসায়নিক থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে প্রভাবিত করে । থাইরয়েড সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে । 

প্রতি ৫-৬ মাস অন্তর অন্তর পরীক্ষা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত লাইফস্টাইল গড়ে তুলতে হবে ।

লেখকের মন্তব্য

বিশ্বে এ থাইরয়েড হরমোন রোগের প্রকোপ এখন ডায়াবেটিসের মতো ঘরে ঘরে বেড়ে গেছে । এর কারণ হলো অনিয়মিত লাইফস্টাইল এবং খাবারে অনিয়ন্ত্রণ । এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আগে আমাদের মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয় এবং তার প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানার পরে নিয়মিত লাইফস্টাইল করতে হবে। 

এবং সকল প্রকার প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিতে হবে । সঠিকভাবে এর চিকিৎসা ও ওষুধ সেবন করতে হবে । আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত আত্মীয়-স্বজনদের সাথে বা বন্ধু- বান্ধবের সাথে শেয়ার করে দিবেন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url