গ্রীষ্ম ,বর্ষা ও শরতের চুলের পরিচর্যা কেমন হবে
প্রিয় পাঠক গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরতের চুলের পরিচর্যা কেমন হবে আপনি হয়তো এ বিষয়ে জানেন না গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরতের চুলের পরিচর্যা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আর সেই সকল বিভিন্ন পরিচর্যা নিয়ে আলোচনা করব। আপনারা অনেকেই জানতে চান গ্রীষ্ম ,বর্ষা ও শরতের চুলের পরিচর্যা কেমন হবে সে সম্পর্কে।
আজকে আমি গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরতের চুলের পরিচর্যা কেমন হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আর্টিকেল লিখেছি। যার মাধ্যমে আপনারা কোন ঋতুতে কেমন চুলের পরিচর্যা করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন । তাই গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরতের চুলের পরিচর্যা কেমন হবে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
সব সময়ই চুলের পরিচর্যার প্রয়োজন আছে । তবে ঋতু ভেদে পরিচর্যার ধরনের রয়েছে পার্থক্য । কারণ একেক ঋতুতে এক এক রকম সমস্যা দেখা দেয় । আর পরিচর্যা করতে হয় সেই অনুযায়ী । তাই গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরতের চুলের পরিচর্যা আপনারা কেমন করে করবেন এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও সুন্দর রাখবেন চুলকে সেই পরামর্শ দিয়েছেন রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচি । চলুন জেনে নিই গ্রীষ্ম ,বর্ষা ও শরতের চুলের পরিচর্যা কেমন হবে।
আরও পড়ুনঃ চুলের ধরন বুঝে সঠিক নিয়মে চুলের পরিচর্যা।
গ্রীষ্মের চুলের যত্নে
গরমের সময় ধুলো ময়লা জমে ও রোদের তাপ লেগে চুলের বেশি ক্ষতি হয়ে যায় । এছাড়া অতিরিক্ত গরমে আমাদের সারা শরীরের মত মাথার ত্বকও ঘামে । এতে ওই ঘামের সঙ্গে ময়লা জমে সহজে । যার কারনে মাথার স্কাল্পে ইনফেকশনও হয়ে যায় । এর ফলে শুরু হয় চুল পড়া । এছাড়া অতিরিক্ত রোদে ঘুরাঘুরি করলে রোদের তাপে চুলেসানবার্ন হয় ।
সানবার্ন হলে চুল হয়ে যায় অনুজ্জ্বল ও ভঙ্গুর । তাই এসব সমস্যা এড়াতে গরমের সময় কিভাবে চুলের পরিচর্যা করবেন চলুন জেনে নিই । পরামর্শ দিয়েছেন রূপ বিশেষজ্ঞশারমিন কচি ।
জেনে নিন খুঁটিনাটি
- সপ্তাহে একদিন চুলে তেললাগাতে পারেন । বাটিতে পরিমাণ মতো নারকেল তেল নিয়ে হালকা গরম করুন । এবার ওই তেলটা চুলের গোড়ায় গোড়ায় ম্যাসাজ করুন । এরপর গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে পানি নিঙরে পুরো মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন 8 থেকে 10 মিনিট এতে চুলের গোড়ায় তেলটা বসবে । পরদিন চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন ।
- চুল শ্যাম্পু করার আগে আঁচড়িয়ে নিন । মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুলের জট ছড়ান । এরপর চুল ভিজিয়ে নিন । তারপর শ্যাম্পু লাগান । একবারে পরিষ্কার না হলে দুইবার শ্যাম্পু লাগান।
- শ্যাম্পু করার পর চুলের পানি হাত দিয়ে চিপে ঝরিয়ে নিন । এরপর পুরো চুলে কন্ডিশনার লাগান।কন্ডিশনার লাগিয়ে পাঁচ থেকে সাত মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বেশি করে পানি দিয়ে চুল ভালো করে ধুবেন যেন চুলের ভেতর শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার লেগে না থাকে।
- ঘরোয়া উপায়ে চুল কন্ডিশনিং করতে চাইলে চুল শ্যাম্পু করার পর একমগ পানিতে ২ টেবিল চামচ শিরকা মিশিয়ে পুরো চুলটা ধুয়ে নিন।
- বাইরে বের হলে চুলে ধুলো ময়লা জমবেই ,তাই নিয়মিত চুল পরিষ্কার করবেন।
- প্রয়োজনে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিনচুল শ্যাম্পু করুন। বেশি শ্যাম্পু করলে চুলের ক্ষতি হয় ,এটা ভুল ধারণা। চুলে ময়লা জমলেই শ্যাম্পু করুন।
- চুলে খুশকি হলে লেবুর রস লাগিয়ে শ্যাম্পু করুন।এছাড়া আমলকির রস চুলের গোড়ায় লাগালে খুশকি কমবে, চুল স্বাস্থ্যজ্জল হবে।
- ভেজা চুল আঁচড়াবেন না ,এতে চুল ছিঁড়ে যাবে।হেয়ার ড্রায়ার না ,স্বাভাবিক আলো বাতাসে চুল শুকানো ভালো।
গ্রীষ্মে ঝরঝরে চুলের জন্য যত্ন
বিভিন্ন ঋতুতে চুলের ধরন বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। তাই চুল ভালো রাখতে চাই নিয়মিত চুলের পরিচর্যা। গরমের এই সময়টাতে চুল ঝরঝরে সুন্দর রাখা খুব সহজ নয়। এ গরমে কিভাবে চুল ঝরঝরে ও ভালো রাখবেন সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচি।
গ্রীষ্মে চুলের কোন পরিচর্যায় চুল করবে ঝরঝরে ও উজ্জ্বল
গ্রীষ্মে চুলের ত্বক ঘেমে ধুলো ময়লা জমে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। এছাড়াও সানবার্ন ও হয়ে থাকে। সুন্দর চুল পেতে হলে প্রথমেই নজর দিন খাওয়া দাওয়ার দিকে,সবুজ শাকসব্জি ও মৌসুমী ফল খেতে হবে। এছাড়া দুধ ডিম তো আছেই। চুলে শক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার না করাই ভালো। এসময় একদিন পরপর চুল শ্যাম্পু করা ভালো। যাদের চুল খুব পাতলা তারা ব্যবহার করতে পারেন ওয়াটার বেস্ট কন্ডিশনার।
আরও পড়ুনঃ শীতে ত্বকের রুক্ষতা দূর করে যত্নের উপায়।
কন্ডিশনার ধোয়ার পর এক মগ পানিতে আধা কাপ সাদা সিরকা মিশিয়ে ওই পানি দিয়ে চুলটা ভালো করে ধুয়ে নিন। এতে চুল ফুরফুরে ও উজ্জ্বল হবে। এছাড়াও চুল শ্যাম্পু করার আগে টক দই ও ডিম ফেটিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন আধাঘন্টা। এরপর চুল ভালো করে শ্যাম্পু করুন। এতে চুলের ভলিউম বাড়বে, চুল হবে ঝরঝরে ও উজ্জ্বল।
বর্ষায় চুলের যত্নে
বর্ষায় স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় চুলে দেখা দেয় নানা সমস্যা। চলতে ফিরতে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। ফলে চুলে দুর্গন্ধ,খুশকি, চিট চিটে ও মলিন হয়ে যায়। এ সময় চুলের জন্য চায় বাড়তি যত্ন। বর্ষায় কিভাবে করবেন চুলের পরিচর্যা পরামর্শ দিয়েছেন রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচি । এ সময়চুলের প্রধান সমস্যা বৃষ্টির পানি। সুন্দর করে সেযে আপনি হয়তো বের হলেন কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্য।
হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি সব এলোমেলো করে দিল। বৃষ্টির ছাট লাগলে চুলের উজ্জ্বলতা তো কমে যাবেই,চুলো ভিজে নেতিয়ে যাবে এবং জট পাকাবে। তাই এ সময় ঘর থেকে বের হওয়ার আগে চুল ঠিকমতো ম্যানেজ করতে হবে। তাহলেই ঠিক থাকবে আপনার স্টাইল স্টেটমেন্ট। এ সময় মাথার ত্বকের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। তাই বর্ষায় চুলের যত্ন অতি জরুরী।
চুল ভালো রাখার জন্য সপ্তাহে একদিন অন্তত আপনার চুলের উপযোগী প্যাক ব্যবহার করুন। এতে আপনার চুলের সমস্যা যেমন যাবে তেমনি চুল পাবে বাড়তি পুষ্টি।
বর্ষায় চুলের জন্য কয়েকটি প্যাক
- আধা কাপ মধু ও সমপরিমাণ অলিভ অয়েল হালকা গরম করে নিন। তারপর সেটা আঙুলের ডগার সাহায্যে পুরো চুলের গোড়ায় লাগান। ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করুন। এতে চুলে আলাদা কন্ডিশনার লাগানোর দরকার নেই এবং চুলের গোড়াও শক্ত হবে।
- একটা পাকা কলা চটকে তার সঙ্গে কয়েক ফোটা অলিভ ওয়েল মিশিয়ে পুরো চুলে লাগান। আধা ঘন্টা পর চুল শ্যাম্পু করে নিন। এতে চুল কন্ডিশনড এবং সফট হবে। ফলে চুল ম্যানেজ করার সহজ হবে।
- যদি আম পাওয়া যায় তাহলে পুদিনা পাতা পেস্ট করে তার সঙ্গে পাকা আম চটকে মিশিয়ে নিন। এবার এই মাস্ক পুরো চুলে লাগান। আধা ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল চকচকে ও ঝরঝরে হবে।
- টক দইয়ের সঙ্গে একটি পাতি লেবুর রস মিশিয়ে লাগান। আধাঘন্টা পর শ্যাম্পু করুন। খুশকি চলে যাবে। চুল ঝরঝরে ও উজ্জ্বল হবে।
আরো কিছু টিপস
- বর্ষায় তৈলাক্ত চুল খুব বেশি নেতিয়ে পড়ে। শ্যাম্পু করার ১৫ মিনিট আগে চুলে লেবুর রস লাগিয়ে শ্যাম্পু করুন।
- বড় দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান। সহজে জট ছাড়বে চুল ছিড়বে না।
- বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি, ঘাম, ময়লা জমে চুলে গন্ধ হয়। এই গন্ধ দূর করতে শ্যাম্পু করার পর এক মগ পানিতে দুই টেবিল চামচ গোলাপ জল, এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
- চুলে যতটা সম্ভব কম ব্লু ডাই ও আয়রন ব্যবহার করতে হবে। কারণ এতে চুল রুক্ষ হয় এবং আগা ফাটে। যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবেই চুল শুকান।
বর্ষায় খুশকি মুক্ত চুলের জন্য যত্ন
খুশকির উপদ্রব কম বেশি সারা বছরই থাকে। কিন্তু বর্ষাকালে খুশকির যন্ত্রণা যেন একটু বেড়েই যায়। আর খুশকি যে চুলের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মাথায় খুশকি হলে চুল পড়া তো অবধারিত। তাই মাথায় খুশকি হলে তা বাড়তে না দিয়ে দ্রুত প্রতিরোধ করুন। কিভাবে প্রতিরোধ করবেন , চলুন জেনে নিই এ বিষয়ে রূপ বিশেষজ্ঞের কিছু পরামর্শ।
বর্ষায় খুশকি দুর করার সহজ উপায়
অনেকে মাথায় তেল দিতে পছন্দ করেন না। কিন্তু খুশকি দূর করতে তেলের ব্যবহারটা বেশি উপকারী। তবে তা লাগাতে হবে একটা বিশেষ নিয়মে ও পদ্ধতিতে। প্রথমে বাটিতে পরিমাণ মতো নারকেল তেল নিয়ে হালকা গরম করুন। এরপর এ তেলের সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার চুলের গোড়ায় ওই মিশ্রণটা বিলি কেটেতুলার সাহায্যে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন।
আরও পড়ুনঃ ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায়।
লাগানো হয়ে গেলে 15 মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে পানি নিঙরে তোয়ালে টা মাথায় পেচিয়ে রাখুন 5 মিনিট। এভাবে পরপর তিনবার করুন। এতে চামড়ার সঙ্গে থাকা খুশকি গুলো আলগা হবে। এবার এক কাপ টক দইয়ের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে একই পদ্ধতিতে মাথায় পুরো চুলের গোড়ায় বিলি কেটে হালকা গরম পানিতে শ্যাম্পু করে নিন।
খুশকি দূরীকরণে প্যাক
চুলের পরিচর্যায় অনেকেই বিভিন্ন প্যাক ব্যবহার করেন। চুল খুশকি মুক্ত করতে এই প্যাকটা বেশ উপকারী। পাচ ছয়টি আমলকি ও শিকাকায় থেঁতো করে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পানিটা ছেঁকে চুলের গোড়ায় বিলি কেটে লাগান। আধাঘন্টা পর শ্যাম্পু করুন। এতে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়বে। চুলের গোড়ায় বাটা মেহেদির রস লাগাতে পারেন। এটাও চুলের জন্য উপকারী।
শরতের চুলের যত্ন
নিয়মিত শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন। চুলের জন্য শ্যাম্পু নয়, ক্ষতিকর হচ্ছে ময়লা। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন চুলে তেল দিন। সারারাত তেল রাখতে না চাইলে অন্তত দুই ঘণ্টা রাখুন। শ্যামপুর পর অবশ্যই ভালো কোন কন্ডিশনার লাগিয়ে দুই থেকেপাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে নিন। চুলে যতটা সম্ভব হিট দেওয়া, আয়রন করা এবং কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্যেরব্যবহার কম করুন।
আরও পড়ুনঃ মেয়েদের থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়?
চেষ্টা করুন সপ্তাহে একদিন বাড়িতে চুলের একটু যত্ন নিতে। টক দই চুলের জন্য খুব ভালো। সঙ্গে একটি ডিম ও একটি লেবুর রস মিলিয়ে চুলে দিয়ে ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করুন। যদি চুল পড়া শুরু হয় তাহলে মেহেদী, পেঁয়াজের রস ও টক দই লাগান। কয়েকদিনের মধ্যেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন। এভাবে শরতে চুলের যত্ন নিতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
সবশেষে বলা যায় যে,চুল ভালো রাখাটা নির্ভর করে পরিচর্যার উপর। হয়তো আপনি নিয়মিত চুল শ্যাম্পু করছেন, কন্ডিশনিং করছেন মাঝে মাঝে চুলের তেলও লাগাচ্ছেন,কিন্তু তারপরও চুলে নানা সমস্যা লেগেই থাকে। এজন্যই আমরা একেক ঋতুতে একেক রকম পরিচর্যা করব। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরতে কেমন পরিচর্যা হবে তা আমরা উপরেই উল্লেখ করেছি
আর সে অনুযায়ী আমরা যদি চুলের পরিচর্যা করে থাকি তবে আমাদের চুল সুন্দর ঝলমলে ও স্বাস্থ্যজ্জল হবে এবং সবশেষে আবারও বলি নজর দিন খাওয়া দাওয়ার দিকে,ব্যালেন্স ডায়েট চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে তাই প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url