ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায়
প্রিয় পাঠক আপনি কি ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় খুঁজছেন কিভাবে ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমাবেন বুঝতে পারছেন না তো তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য । এই আর্টিকেলে পানি পান করা, চিনি বাদ দেওয়া, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, সালাদ খাওয়া, প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যার মাধ্যমে আপনি ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন। আশা করি এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি উপকৃত হবেন।
ব্যায়াম ছাড়াই কিভাবে ওজন কমানো যায় তার উপায় সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে তাই এই আর্টিকেলটি না টেনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন । তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় গুল সম্পর্কে ।
ভূমিকা
দৈনন্দিন জীবনে শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন। নাগরিক ব্যাস্ততা অবসর দেয় না, শরীর চর্চা করার সুযোগ দেয়না। সুযোগ পেলেও শরীর চর্চা করা হয় না অলসতার কারণে। তার উপর করনার সময় দীর্ঘদিন ঘরে থেকে অনেকের ওজন বেড়ে গেছে। কিন্তু নিজেকে ফিট ও সুস্থ রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই প্রয়োজন।
তাই ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় গুলো বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মেয়েদের থাইরয়েড সমস্যা
নিয়মিত পানি পান করা
ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে একটি হল নিয়মিত পানি পান করা। নিয়মিত পানি পান করা যে কতো উপকারী তা সকলেরই জানা। নিয়মিত পানি পান করলে অনেক শারীরিক জটিলতা কমে যায় এবং শরীর ও ত্বক সুস্থ রাখে। বাড়তি ওজনের ক্ষেত্রেও তাই। ওজন কমানোর প্রথম পদক্ষেপই হলো নিয়মিত ৩-৪ লিটার পানি সারাদিনে পান করা।
পানি শরীরকে আর্দ্র রাখে এবং বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি করে।পানি পান করলে থাকা যায় ফলে খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়। এছাড়াও শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায় নিয়মিত পানি পান করলে।
চিনি খাওয়া বাদ দেওয়া
ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি উপায় হলো চিনি খাওয়া বাদ দেওয়া। চিনি খাওয়া বাদ দেওয়ার মানে হলো চিনি ও চিনিজাতীয় সকল প্রকার খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। যে সকল ব্যাক্তির চিনি বা চিনিজাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস আছে তারা আস্তে আস্তে চিনি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন। চিনি উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার।
উচ্চ ক্যালরি ফুরাতে প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়। যেহেতু আপনি শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই ওজন কমাতে চান তাই আপনাকে চিনি খাওয়া বাদ দিতে হবে এর বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, চিনি হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন জটিলতার কারণ হয় ও বিপাক ক্রিয়া ধীর করে দেয়।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বাড়ানো
ডায়েট তালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বাড়ানো এবং চিনিযুক্ত খাবার বাদ দেওয়া। বিভিন্ন রঙের শাক-সবজি, সব রকমের ডাল, ডিম, দুধ, বাদাম, সয়া সমৃদ্ধ খাবার ইত্যাদি প্রতিদিনের ডায়েট তালিকায় রাখুন। ডায়েটের মধ্যে প্রোটিনযুক্ত খাবার থাকলে আমাদের শরীরের নানান সমস্যা সমাধান করে থাকে। ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি উপায় হল প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
অনেকের ডায়েট করলে অল্প খাওয়ার কারণে তাড়াতাড়ি ক্ষুধা লেগে যায়। এই প্রোটিন যুক্ত খাবার আপনার অতিরিক্ত ক্ষুধা দূর করবে ও দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধামুক্ত রাখবে।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি অন্যতম উপায় হলো ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার আপনার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করবে এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধামুক্ত রাখবে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ খুবই জরুরী ওজন কমাতে চাইলে। অনেক গবেষণায় পাওয়া গেছে ভিসকোস জাতীয় খাবার বেশি খেলে ওজন তাড়াতাড়ি কমে।
ফ্ল্যাক্সসিড, ওটস, কাক্জী লেবু, বিনস, কমলালেবুর মতো খাবারে বেশি ফাইবার পাওয়া যায়।সকালে খালি পেটে কাক্জী লেবুর রস উসুম গরম পানিতে এক চামচ মধু দিয়ে খেতে পারেন। যাদের গ্যাসের সমস্যা তারা ভরা পেটে খেতে পারেন। এতে অতিরিক্ত মেদ কমবে। ওটসের খিচুড়ি, অথবা সুধু বাদাম কিসমিস দিয়ে দুধে ভিজিয়ে খেতে পারেন খুব সহজেই।
ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমাতে হলে যেসব খাবারের ফাইবার থাকে সেসব খাবারগুলো বেশি বেশি করে খেতে হবে।
সালাদ খাওয়া
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ও অসময়ে ক্ষুধা মেটানোর জন্য সালাদ খাওয়া এর তুলনা নেই। শসা, টমেটো, গাজর, লেবু, বিট, মাশরুম, লেটুস-পাতা ইত্যাদির সাথে একটু টক দই মিশিয়ে সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন। এটি অনেকক্ষণ পেটে থাকবে, মিনারেল যোগাবে এবং ক্ষুদা মুক্ত রাখবে। এক থেকে দুইবার সালাদ খেতে পারেন এতে ভাজা পোরা খাওয়ার আগ্রহ কমে যাবে।
হাটার অভ্যাস করা
প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৪০ মিনিট সকাল বা সন্ধ্যায় হাটার অভ্যাস করা। না হলেও অন্তত ৩০ মিনিট হাটুন। হাটলে বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি ঘটে ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যায়াম হয়। যতোবার খাবেন ততোবার খাবার গ্রহণের পরে ১ বার হাটার চেষ্টা করুন। যারা বেশি হাঁটতে পারেন না তারা অল্প অল্প করে হাঁটার অভ্যাস করবেন ।ওজন কমাতে চাইলে এটাই সবচেয়ে কার্যকর এবং উপকারী টিপস।
খাবার ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া
খাবার ভালো করে ২০ থেকে ৩০ বার চিবিয়ে খেতে হবে। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে না খেলে খাবারগুলো হজম হতে সময় লাগে। তাই খাবার খাওয়ার সময় ভালো করে চিবিয়ে খেলে খাবার সহজে হজম হয়ে থাকে। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে না খেলে সে খাবারগুলো তাড়াতাড়ি হজম হয় না। যে খাবারগুলো হজম হয় না সেগুলো শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমা হয়ে থাকে।
এছাড়া খাবার ঠিকমত চিবালে ক্যালরির পরিমাণ কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল ব্যাক্তিরা কম চিবিয়ে খাবার খায় তাদের ওজন বাড়ে। আর যারা খাবার বেশি চিবিয়ে খায় তাদের ওজন কমে । তাই ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমাতে হলে খাবার ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া।
অল্প খাওয়া এবং মন দিয়ে খাওয়া
খাবার খেলেই খাবারে মনযোগ দিয়ে খাবেন। ফলে মস্তিষ্ক বার্তা পাঠায় পেট ভরে গিয়েছে। টেলিভিশন, মোবাইল বা ল্যাপটপ দেখে খাবার খাবেন না। টেলিভিশন মোবাইল বা ল্যাপটপ দেখে খাবার খেলে মনের অজান্তে বেশি খাওয়া হয়ে যায় । এজন্য খাবার খাওয়ার সময় এগুলো থেকে বিরত থাকবেন। খাবার খাওয়ার সময় মনোযোগ দিয়ে এবং ভালো করে চিবিয়ে খাবার খাবেন ।
অল্প পরিমাণে প্রতিটা পদই খাবেন, তাহলে শরীরে কম ক্যালরি যাবে।ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় হচ্ছে খাবার অল্প খাওয়া এবং মন দিয়ে খাওয়া। নিয়মগুলো প্রতিদিন পালন করলে ওজন কমবেই।
অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা
ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমাতে হলে অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা। চানাচুর, চিপস, চকলেট, বারগার, পিৎজার মতো মুখরোচক ফাস্টফুড খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলো খাবার মুখরোচক হলেও অস্বাস্থ্যকর এবং ওজন বৃদ্ধি করে। তাই কাজ করতে করতে খিদে লাগলে অথবা বিকেলের নাস্তা হিসেবে ড্রাই ফ্রূটস বাদাম জাতীয় স্বাস্থ্যকর হালকা খাবার খেতে পারেন।
অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন তাহলে শরীর সুস্থ থাকবে আবার ওজনও কমবে।
প্যাকেট জাতীয় খাবার এবং পানীয় না খাওয়া
বিভিন্ন রকমের ড্রিংকস ও প্যাকেটের ফলের রস খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করবেন। কারণ কৃত্রিম ভাবে তৈরি ফলের রস ও বিভিন্ন রকমের ড্রিংকে যে পরিমাণ সুগার থাকে তাতে ওজন বেড়ে যাবে। তাই প্যাকেট জাতীয় কোমল পানিয় খাওয়া বর্জন করতে হবে ওজন কমাতে হলে। এর পরিবর্তে চা, কফি অথবা গ্রিন টি চিনি ছাড়া খেতে পারেন।
চিনি ছাড়া না খেতে পারলে একটু মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।প্যাকেট জাতীয় খাবারগুলোতে ফলিক এসিড নামে রাসায়নিক থাকে যা আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক হয়। এই ফলিক এসিড আমাদের পেটের ভিতরের ভালো ব্যাকটেরিয়া গুলো মেরে ফেলে। যার কারণে ফ্যাট বার্ন করতে অনেক অসুবিধা হয় ।
তাই ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় হিসেবে এ প্যাকেট জাতীয় খাবার এবং পানীয় না খাওয়া।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা
মানসিক চাপ বেশি থাকলে ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে ওজন বাড়বে। মানসিক চাপের ফলে আমাদের শরীরে স্টেরয়েড হরমোন নিঃসরণ হয় যার কারণে ইনসুলিনস রেজিস্ট্যান্স হয় যার কারণে শরীরে ফ্যাট জমা হয়ে থাকে এবং এভাবে আমাদের শরীরের ওজন বাড়ে । মানসিক চাপের কারণ খুঁজে বের করে এবং তার সমাধান করে মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন।
এতে নিজে ভালো থাকবেন সকলকে ভালো রাখতে পারবেন।কোন কাজ করলে মানসিক চাপ মুক্ত থাকবেন সেগুলো কাজ করেন। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে ও ঘুম ঠিকমতো হলে ওজন কমবে।
লেখকের মন্তব্য
উপরিক্ত বিষয়গুলো নিয়মিত মেনে চললে ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমবে ও শরীর সুস্থ থাকবে। ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় গুলো নিয়মিত মেনে চললেই আপনি পেতে পারেন সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন। কারন ওজন কম হলে শরীর সুস্থ ও মন ভালো থাকে।
এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন সকলের কাছে শেয়ার করে দিবেন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url