শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়

প্রিয় পাঠক আপনি কি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় খুঁজছেন কিভাবে শিশুর রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করা যায় বুঝতে পারছেন না তো তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য । এই আর্টিকেলে শিশুর খাবার, শিশু্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম, শিশুর সবগুলো টিকা সময় মত দেওয়া প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । আশাকরি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানার পরে আপনি উপকৃত হবেন ।
শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে এ আর্টিকেলে জানানো হয়েছে । তাই এই আর্টিকেলটি না টেনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন । তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় গুলো ।

ভূমিকা

শিশু মায়ের শরীরে থাকাকালীন শিশুর শরীরে অ‍্যান্টিবডি সরবরাহ হয়ে থাকে। ফলে শিশু জন্মের পরে কয়েকদিন বিভিন্ন রোগ জীবাণু থেকে নীরাপত্তা পেয়ে থাকে। এখন করনাকালীন সময়ে শিশুর যত্ন খুবই জরুরী। শিশুর যত্নের পাশাপাশি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানতে হবে কর। শিশুরা অনেক নাজুক হয়ে থাকে । 

তাই তাদের যত্ন বেশি করে নিতে হয় । ০ থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম থাকে । এই সময় শিশুদের অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে । শিশুদের খাওয়া,ঘুম, নড়াচড়া ইত্যাদি ঠিক মত করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । নিম্নে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। 

শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ

শিশুদের আজকাল খাবারের অভ্যাস চলাফেরা সবকিছুই এখন অনিয়ম হয়ে গেছে শিশুরা এখন বাড়ির খাবারের চেয়ে বাইরে তৈলাক্ত মসলা জাতীয় খাবার এবং অপুষ্টিকর খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও শিশুদের নিয়মমত ঘুম খেলাধুলা সবকিছুই অনিয়ম হয়ে গিয়েছে। শিশুরা আগের মত আর মাঠে পার্কে ইত্যাদি জায়গায় খেলে বেড়াতে পারে না। 
যার কারনে শিশুদের শরীরে ইমিউনিটি পাওয়ার আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। আর এ ইমিউনিটি সিস্টেম কমে যাওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। আজকাল বাচ্চাদের প্লেটে দৈনন্দিন খাবারে সবুজ শাকসবজি ফলমূল ডাল সহ অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদানের পরিমাণ কমে গিয়েছে। এসব খাবার কমিয়ে দিয়ে বাইরের খাবারে বেশি আকৃষ্ট হয়েছে। 

শিশুদের এমন অনিয়মিত জীবন যাপন করায় শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি কমে গিয়েছে।

শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো

কে মায়ের শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় গুলোর মধ্যে একটি উপায় হল শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো। শিশুর জন্মানোর ছয় ঘন্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই জরুরি এই দুগ্ধকে শাল দুধ বলা হয়। শাল দুধকে সকল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রথম টিকা ও বলা যেতে পারে। 

মায়ের বুকের দুধে আছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, ফ‍্যাট, শর্করা,অ‍্যান্টিবডি,প্রোবায়োটিক্স। মায়ের বুকের দুধ পানের ফলে শিশুর শরীরে এই সবকিছু সরবরাহ হয়ে থাকে।ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই শিশুর জন্মের পর থেকে দুই থেকে তিন বছর পযর্ন্ত স্তন‍্যপান করানো খুবই জরুরী। মায়ের বুকের দুধে আল্লাহ প্রদত্ত শিশুর জন্মের পর রোগ প্রতিরধের জন্য যা প্রয়োজন তার সবকিছু দিয়ে রেখেছেন । 

তাই শিশুকে জন্মের পর থেকেই মায়ের বুকের দুধ খওয়াতে হবে । তাহলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

শিশুর সবগুলো টিকা সময়মতো দেওয়া

শিশু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় গুলোর আরেকটি হলো শিশুর সবগুলো টিকা সময় মত দেওয়া। শিশুর জন্মের পর থেকে বিভিন্ন রকমের টিকা দেওয়া লাগে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে ও মরণব্যাধি রোগ থেকে রক্ষা করে । শিশু জন্মের ১ মাস থেকে টিকা দেওয়া শুরু করতে হয় ।

শিশুর সবগুলো টিকা দেওয়া হয়েছে কিনা তা এবিষয়ে মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে । শিশুর সবগুলো টিকা সময়মতো দিলে প্রয়োজনীয় অ‍্যান্টিবডি গড়ে তুলেত সহায়তা করে ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।

শিশুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

শিশুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির। শিশুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ। কারণ অপরিচ্ছন্নতার ফলে বিভিন্ন রকমের অসুখ শিশুদের শরীরে বাসা বাধে।তাই শিশুসহ ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরী। বিশেষ করে শিশুদের খেলনাপাতিল,বিছানার চাদর,

বালিশ কাভার,মেঝে ও জামাকাপড় এবং যেগুলোতে শিশু মুখ দেয় সেগুলো জিনিস পত্র সবসময় পরিষ্কার ও জীবাণু মুক্ত রাখতে হবে।শিশুর হাত পায়ের আঙ্গুলের নখ এবং মাথার চুল সময় মত কেটে দিতে হবে। শিশুকে গোসল করানর সময় হালকা কুসুম গরম জিবানু মুক্ত সাবান দিয়ে গোসল করাতে হবে । 

শিশুর এসব ছোট খাট বিষয়ের পরিষ্কার পরিছন্নতার প্রতি মায়েদের বিষেশভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম

শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি উপায় হলো শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম।শিশুর পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম খুবই প্রয়োজন। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে শরীরে সাইটোকিন্স নামক প্রোটিনের উৎপাদন কমে যায়। তাই ৮-১০ ঘন্টা শিশুদের ঘুমানো দরকার । শিশুর পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম সাইটোকিন্স সংক্রমণের সাথে মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। 

ফলে শিশুদের মন ফুরফুরে থাকে যে কোন কাজে উৎসাহিতো হয় ও খিটখিটে মেজাজ থাকে না।

শিশুর প্রতিদিনের খাবার

শিশুর ৬ মাস বয়সের পর থেকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুর প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুষম, প্রোটিন,আমিষ ও পুষ্টিকর উপাদান জাতীয় খাবার রাখতে হবে। ফলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের হাত থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে এই খাবার গুলো। শিশুদের সময় মতো ও সঠিক খাদ‍্যাভ‍্যাসে গড়েতোলা অনেক প্রয়োজন শিশুকে সুস্থ রাখতে হলে।

শিশুর হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়

শিশুকে ৬ মাসের পর থেকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি নয় মাস পর্যন্ত তিনবার সলিড খাবার খেতে দেওয়া জরুরী। ছয় মাসের পর থেকে বাচ্চাকে শুধু মায়ের বুকের দুধ না খাইয়ে রেখে বাইরের পুষ্টিকর সলিড খাবার খেতে দিতে হবে। বাচ্চাদের খাবারের কিছু অনিয়মের কারণে হজম শক্তি কমে যায়। বাচ্চাদের এই হজম শক্তি বৃদ্ধির জন্য বাচ্চাদেরকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। 

এবং বাচ্চাদেরকে বাইরের খাবার থেকে বিরত রাখতে হবে। বাচ্চাদেরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বোঝাতে হবে। খাওয়ার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধোঁয়া নোংরা হাত মুখে না দেওয়া ইত্যাদি অভ্যাস ছোট থেকেই শেখানোর চেষ্টা করতে হবে। অনেক সময় হজমের সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করাতে হবে। 

লক্ষ্য রাখতে হবে কোন খাবারগুলো নিয়ে বাচ্চাদের হজম শক্তি কমে যাচ্ছে সেসব খাবারগুলো বাচ্চাদের খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। বাচ্চাদেরকে নিয়মিত ঘুম ও খেলাধুলা করাতে হবে। শিশুদের হজম শক্তি কমে গেলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। তাই শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে ধরা যায় শিশুর হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় গুলোকে।

ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়ানো

শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম উপায় হলো শিশুকে ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়ানো। শিশুকে যখন খাবার খাওয়ানো হবে তখন ভিটামিনযুক্ত খাবার গুলো খাওয়াতে হবে। নিম্নে ভিটামিন যুক্ত খাবার গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • প্রতিদিনের খাবারে ভিটামিন 'সি' জাতীয় খাবার রাখতে হবে এতে অ‍্যান্টিবডির গঠনকে উত্তেজিত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যেমন: টক জাতীয় ফল,জাম,কাচা মরিচ,টমেটো ইত্যাদি উদ্ভিদ উৎসে ভিটামিন 'সি' উপস্থিত রয়েছে।
  • ভিটামিন 'ই' জাতীয় খাবার যেমন: সূর্যমূখীর তেল, কাট বাদাম,তেল জাতীয় মাছ ইত্যাদি খাবার অ‍্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • মাছ, মাংস, দুধ, বীজ ইত্যাদি জিঙ্কের উৎস। জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও ঘা ভালো করতে সাহায্য করে।
  • প্রোটিন জাতীয় খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যেমন: মাছ,ডিম,মটরশুটি,মাংস,লবণ ছাড়া শুকনো ফল ইত্যাদি।
  • প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার শরীরের পক্ষে উপকারী। এগুলো এক রকমের জীবিত ও স্বাস্থ্য উপযোগী ব‍্যাক্টেরিয়া টক দই, মিষ্টি দই, দই জাতীয় খাবারের মতো পদার্থে উপস্থিত রয়েছে।প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার আমাদের দেহের খারাপ ব‍্যাক্টেরিয়াকে দূর করে এবং এদের বাসা বাধতে দেয় না।
  • এছাড়াও ভিটামিন 'এ','ডি', 'বি৬', 'বি১২', ফোলেট, আয়রোন সহ ইত‍্যাদি পুষ্টিকর উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

লেখকের মন্তব্য 

উপরিক্ত শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় গুলো মেনে চললে ও খেয়াল রাখলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। শিশু সুস্বাস্থ্যবান হবে এবং সঠিক ভাবে বিকাশ ঘটবে। আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সকলের কাছে শেয়ার করে দিবেন ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url