দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ায় ইসলামের আগমনের আবির্ভাব
প্রিয় পাঠক আপনি কি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসলামের আগমনের আবির্ভাব সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। আপনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসলামের আগমনের আবির্ভাব এই আর্টিকেলে বণিকদের ভূমিকা, বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক পথের মাধ্যম, মুসলিম বণিক কর্তৃক বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসলামের আগমনের আবির্ভাব এই আর্টিকেলটিতে কিভাবে এশিয়া মহাদেশে ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসলামের আগমনের আবির্ভাব আর্টিকেলটি আপনারা না টেনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
চীন এশিয়ার প্রভাবশালী রাজ্য হিসেবে পরিচিত হলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন প্রভাবিত বা চীন শাসিত কোন রাজ্য ছিল না। তবে চীনের ব্যাপক ক্ষমতা ও শক্তির জন্য সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তার রাজনৈতিক প্রভাব বিদ্যমান ছিল । এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর দূত ও উপঢৌকন প্রেরণের মাধ্যমে চীনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখত ।
সমগ্র দীপাঞ্চল বাসী শ্রী বিজয়া ও মাজাপাহিতদের কুশাসনের ছিল অত্যাচারিত, নির্যাতিত এবং বিভিন্ন সামাজিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। মুষ্টি মেয় শহরবাসী ছাড়া দীপাঞ্চলের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ জীবন যাপন করতো এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। তারা বন্য-পশুর ন্যায় বসবাস করতো।
আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক ইতিহাসে ইসলাম পূর্ব যুগে প্রাচীন আরবের প্রভাব বিস্তার ।
মানুষের মাংস ভক্ষণ করতো এবং প্রত্যুষে যে জিনিসটা দেখতো সারাদিন তারাই পুজা করত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ও ধর্মীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার পটভূমিতে সেখানে ইসলামের জয়যাত্রা শুরু হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসলামের আগমন সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।
ইসলাম প্রসারে বণিকদের ভূমিকা
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ইসলাম বিস্তারের ক্ষেত্রে বণিকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে প্রধানত আরব, পারসিক, গুজরাটি বণিকদের মাধ্যমে ইসলামের আবির্ভাব ও সম্প্রসারণ ঘটে। তবে অবস্থানগত কারণে সেখানে ইসলামের বিস্তারে গুজরাটি বণিকদের ভূমিকা ছিল সর্বাধিক। আরব বণিকরা ইসলামের আবির্ভাবের বহু বছর পূর্ব থেকে ব্যবসায় বাণিজ্যের জন্য
চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাতায়াত করত। তারা ভারতের পশ্চিম উপকূল হয়ে সমুদ্রপথে দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন বন্দরে যেত এবং দীপাঞ্চলের মসলা ও চীন থেকে আগত রেশম, বুটিদার সুতি বস্ত্র ও অন্যান্য কারু কার্য খচিত পোশাক এবং তৈজসপত্র সংগ্রহ করতো, এসব সামগ্রী তারা পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও গ্রিকরোমানদের কাছে বিক্রি করতো।
বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক পথের মাধ্যমে
অর্থনৈতিক প্রয়োজনে মানুষ দূর থেকেও বহুদূরে ছুটে আসে জীবন- জীবিকার তাগিদে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি । গুজরাটি ও তামিল বণিকদের ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বহু পূর্ব থেকে ব্যবসার বাণিজ্য উপলক্ষে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাতায়াত ছিল এবং তারা সেখানে ভারতীয় শিক্ষা- সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ।
গুজরাটে আরব বণিকদের ভূমিকা
আরবদের সাথে এবার বাণিজ্যিক সম্পর্কের মধ্য দিয়েই গুজরাটের প্রথম ইসলামের বিস্তারি ঘটে । অষ্টম শতাব্দীতে আরব গান কর্তৃক মুলতান ও সিন্দুর বিজিত হলে গুজরাটিদের সাথে আরবদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয় এবং ব্যবসায় বাণিজ্যের জন্য পূর্বাপেক্ষা অধিকারে আরবরা গুজরাটে আসতে থাকে । নবম শতাব্দীতে আরব বণিকদের অনেকেই গুজরাটে
আরও পড়ুনঃ প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ ।
বসতি স্থাপনের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে ।প্রায় দশ শতাব্দীতে গুজরাটসহ দক্ষিণা পশ্চিম ভারতের মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে আরবদের পশ্চিম ভারতীয় দীপাঞ্চলীয় বাণিজ্যিক তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং তার দিপাঞ্চলীয় পণ্য সামগ্রী সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অধিক হারে গুজরাটে আসতে থাকে ।
মুসলিম বণিক কর্তৃক বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে
মুসলিম বণিকদের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বন্দর সমূহে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন স্থানীয়দের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে পণ্য সামগ্রী সংগ্রহ সংগৃহীত পণ্য সামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণ তাদের সঙ্গে আনিত ইউরোপীয় পশ্চিম এশিয়া ও ভারতীয় পণ্য সামগ্রী বিক্রয়। নিজেদের নিরাপত্তা বিধান প্রভৃতির জন্য দীপাঞ্চলের বিভিন্ন বন্দরে আগত মুসলিম বণিকদের
বাণিজ্য বসতি গড়ে তোলা পরিহার্য হয়ে পড়ে । ফলে বাণিজ্য বসতি স্থাপনের পর মুসলিম বণিকদের অনেকেই তাদের পরিবার পরিজনসহ সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং তাদের সন্তানাদির মাধ্যমে সেখানে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে । এভাবে মুসলিম বণিকদের স্থায়ী বসতি স্থাপন ও স্থানীয়দের সাথে বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপনের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসলামের বিস্তার শুরু হয় ।
সামাজিক ক্ষেত্রে ইসলামের সম্প্রসারণ
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আগত ভারতীয় আরব ও পারসিক মুসলিম বণিকদের আচার-ব্যবহার বেশভূষা চালচলন সেখানে ইসলামের সম্প্রসারণ এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল । দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে মুষ্টিমে শহরবাসী ছাড়া অধিকাংশ লোক বর্বর নোংরা ও ইতর প্রকৃতির ছিল । পক্ষান্তরে এ অঞ্চলে আগত মুসলমান বণিকরা
আরও পড়ুনঃ প্রাচীন বাংলার ভৌগলিক পরিচয় সমূহ।
ইসলামের ঐতিহ্য অনুযায়ী সমাজবদ্ধ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপন করত । ওযু, গোসল প্রভৃতির মাধ্যমে তারা প্রাত্যহিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতো। তারা অত্যন্ত সহনশীলতা ও সহমর্মিতার সাথে পারস্পরিক কথাবার্তা, লেনদেন সম্পাদন করতো । অসাধারণ মানবিক গুণসম্পন্ন এসব মুসলিম বণিক অসভ্য, বর্বর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবাসীদের কাছে
দেবতা তুল্য প্রতিয়মান হয় এবং ইসলামের প্রতি তারা গভীরভাবে আকৃষ্ট হয় ।
ইসলামের উদার দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে
ইসলামের নাগরিক উদারতা তার অনুসারীদের অনুপ্রাণিত করে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আগত মুসলিম বণিকদের ধর্মীয় রীতিনীতি এবং তাদের বর্ণ শ্রেণীহীন জীবন ব্যবস্থা সেখানকার আদিবাসীদের ইসলাম গ্রহণে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত করেছিল । শ্রেণীভেদ প্রথা সাধারণ জনগোষ্ঠীর জীবনকে ক্ষতবিক্ষত ও জর্জরিত করে তুলেছিল। কিন্তু মুসলমানদের নিকট
সাদা কালো, প্রভু ভৃত্য, ধনী-গরীব, শাসক- শাসিতের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। ইসলামী আদর্শে উজ্জীবিত মুসলমানগণ সেখানে তাকে অপরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায়, যোগ্যতার ভিত্তিতে ইমামতির দায়িত্ব পালন। ফলে নব দীক্ষিত মুসলমানগণ এতে অনুপ্রাণিত হতো ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url