রাজনৈতিক ইতিহাসে ইসলাম পূর্ব যুগে প্রাচীন আরবের প্রভাব বিস্তার
রাজনৈতিক ইতিহাসে ইসলাম পূর্ব যুগে প্রাচীন আরবের প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে কি আপনি জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। রাজনৈতিক ইতিহাসে ইসলাম পূর্ব যুগে প্রাচীন আরবের প্রভাব বিস্তার পোস্টটিতে আরব দেশের উৎপত্তি, ভৌগোলিক অবস্থান, রাজনৈতিক অবস্থান প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। রাজনৈতিক ইতিহাসে ইসলাম পূর্ব যুগে প্রাচীন আরবের প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আরবের প্রভাব ধীরে ধীরে শুরু হয় পরবর্তীতে ইসলামিক খেলাফতের পর রাজনৈতিক ইতিহাস ইসলামের পূর্ব যুগে প্রাচীন আরবের প্রভাব বিস্তার লাভ করে । আসুন আমরা রাজনৈতিক ইতিহাসে ইসলাম পূর্ব যুগে প্রাচীন আরবের প্রভাব সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ি।
ভূমিকা
আমাদের এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম আরব উপদ্বীপ অবস্থিত। এর তিন দিকে জল এবং একদিকে স্থল।অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কৃত হওয়ার আগে আরব দেশ ইউরোপ আফ্রিকা ও এশিয়ার তথা পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বলে গণ্য হতো। আরব শব্দটি আর বা তুন থেকে এসেছে। আর বাতুন শব্দের অর্থ বৃক্ষলতা হীন মরুভূমি।
নিম্নের তিনটি বৈশিষ্ট্য যাদের মধ্যে পাওয়া যায় তাদের আরব জাতি নামে অভিহিত করা যায় ।
- যাদের ভাষা আরবি ।
- যারা আরব বংশোদ্ভুত ।
- যারা জাজিরাতুল আরব বা আরব উপদ্বীপের অধিবাসী |
আধুনিক গবেষকগণের মতে, আরব-গণ শুধু যে সেমি টিক জাতির অন্তর্ভুক্ত তা নয় বরং আরবদেশি সমগ্র সেমিতিক জাতির লালন ভূমি ছিল। আরব ভূভাগ এর অধিকাংশই মরু। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং এদের জীবিকার সন্ধানে খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ বছর আগে সেমিটিকদের এক গোষ্ঠীর আরব সাগরের পশ্চিমপাড় ধরে অথবা পূর্ব আফ্রিকা হয়ে নীলনদের উপত্যকায় পৌঁছেছিল।
আর এই মিশ্রণেই উত্তর কালের ইতিহাসে জন্ম নিয়েছিল মিশরীয়দের। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১২০০ এর মধ্যে সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনে পৌঁছান হিব্রু রা। এক ঈশ্বর বাদ সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে প্রথম স্পষ্ট ধারণা দেন হিব্রুরা এবং সবশেষে ইসলাম ধর্ম একেশ্বরবাদ সম্পর্কে ধারণা দেয়। রাজনৈতিক ইতিহাসে ইসলাম পূর্ব যুগে প্রাচীন আরবের অবস্থান মূলত এখান থেকেই শুরু হয় ।
আরবের ভৌগোলিক গুরুত্ব
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আরবের ভৌগলিক গুরুত্ব অপরিসীম। আরব উপদ্বীপ এশিয়ার ইউরোপ ও আফ্রিকার সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। সুদূর অতীতকাল হতে ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ব্যবসায় বাণিজ্যের চলাচল পথ হিসেবে আরবের সুখ্যাতি রয়েছে। এছাড়া তেল,গ্যাস, স্বর্ণ তথা প্রাকৃতিক ক্ষণিক সম্পদ আরবকে বিশ্বের কাছে তাৎপর্যমন্ডিত করে তুলেছে।
আরো পড়ুনঃ প্রাচীন বাংলার ভৌগলিক পরিচয় সমূহ ।
বিশ্বের মোড়ল দেশগুলোর কাছে আরব দেশের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লামা শিবলী নোমানীর মতে, আরবের দৈর্ঘ্য ১৫ শত মাইল ও প্রস্থ ৬ শত মাইল।
প্রাচীন আরবের ভূপ্রকৃতি
ভূতাত্বিকদের মতে, সাহারার কিছু অংশ এবং এশিয়ার যে মরু তট মধ্য পারস্য ও গো বি মরুভূমির ভিতর দিয়ে গেছে তা আরবের অন্তর্গত ছিল। উত্তরে মিডিয়ানে ৯, ০০০ ফুট ও দক্ষিণে আল ইয়ামিনে ১৪, ০০০ ফুট, আল হিজাবে অন্তর্গত আল সারাহ প্রায় ১০, ০০০ ফুট উচ্চতায় স্পর্শ করেছে। উত্তর মধ্য মালভূমি নাজোদ এর গড় উচ্চতা ২, ৫০০ ফুট।
এই পর্বতমালা, উচ্চভূমি ও তাদের ব্যতিক্রম গুলো ছাড়া আরো মূলত মরুভূমি অন্যভূমি নিয়ে গঠিত। আরব দেশের প্রায় তিন ভাগের এক অংশ শুষ্ক বালিকা পূর্ণ উর্বর মরুভূমি। আরব বাসি এই মরুভূমি অঞ্চলকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে
- আল নুফুদ
- আল দাহানা ও
- আল হাররাহ
ভৌগলিক দিক থেকে আরব দেশ আবার তিনটি ভাগে বিভক্ত
- উত্তর আরব
- মধ্য আরব
- দক্ষিণ আরব
- উত্তর আরবঃ উত্তর আরবে প্রায় অধিকাংশ স্থান মরুভূমি। এ মরু অঞ্চল নুফুদ, দাহানা, ও দাররাহএতিন ভাগে বিভক্ত যা উপর আলোচিত হয়েছে।
- মধ্য আরবঃ মধ্য আরবের কিছু অংশ মরুময়। এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি নগর গড়ে উঠেছে। হেজাজ, নজদ,আল আহসাএই তিনটি প্রদেশ নিয়ে মধ্য আরব গঠিত ছিল। ইতিহাস প্রসিদ্ধ মক্কা নগরী ছিল হেজা জের রাজধানী। মক্কা, মদিনা ও তায়েফ এ প্রদেশের প্রধান শহর।
- দক্ষিণ আরবঃ ইয়েমেন, হাজরা মাউথ ও ওমান নিয়ে দক্ষিণ আরব গঠিত। এটা আরব উপদ্বীপের সর্বাধিক উর্বর অঞ্চল। ইয়েমেন শব্দের অর্থ সুখী। ধনসম্পদ ও রকমারি পণ্যদ্রব্যের জন্য প্রাচীনকালে এটাকে 'সুখি আরব ভূমি' বা সৌভাগ্য আরব ( Arabia Felix) নামে অভিহিত করা হতো।
প্রাচীন আরবের আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক সম্পদ
প্রাচীন আরবের আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক সম্পদ রাজনৈতিক ইতিহাসে ইসলাম পূর্ব যুগে প্রাচীন আরবের প্রভাব বিস্তার করে। আরবের আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন। সারা বছর ১০" ইঞ্চির ও কম বৃষ্টিপাত হয়। মধ্য আরবে মৌসুমী আবহাওয়া ও দক্ষিণ আরবের ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রভাবে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। কয়েকটি উপকূলবর্তী শহর ও জল বিধৌত উপত্যকা
ছাড়া আরবের আবহাওয়া অত্যন্ত উষ্ণ ও শুষ্ক। P. K. হিট্টির মতে, হিজাজের নিম্নভূমিতে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ৯০° ফারেনহাইট এর কাছাকাছি। আল মদিনার ঘর তাপমাত্রা ৭০° ফারেনহাইট এর থেকে কিছু বেশি। ১২ মাস প্রবাহিত হয় এরূপ কোন নদী আরবে নেই। কিছু স্রোতস্বিনী আছে যেগুলো বৃষ্টিপাতের সময় প্রবাহিত হয়, এরা খরার সময় শুকিয়ে যায়।
নৌ চলাচলের জন্য উপযোগী নদী না থাকায় উট আরবের প্রধান বাহন। আরবের আবহাওয়া আরবের জাতীয় চলচ্চিত্র কে যেমন প্রভাবিত করেছে, তেমনি জাতীয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করেছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ
কৃষিকাজের অনুপোযোগী হওয়ায় আরব দেশে প্রধান খাদ্য খেজুর। খেজুরের বিচি গুঁড়িয়ে উটের খাদ্য তৈরি করা হয়। খেজুরের রস পানিও হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খেজুর গাছের কাঠ জ্বালানি রূপে ব্যবহার এবং এর শাখা হতে মাদুর ও ছাদের উপকরণ তৈরি করা হয়। এর ছাল থেকে দড়ি তৈরি হয়। P. K. Hitti বলেন " Among the Arabian flora the date plam tree is queen."
আরবীয় উদ্ভিদ কুলের মধ্যে খেজুর গাছকে রানী বলা হয়। আরবের মধ্যে ইয়েমেন সর্বাপেক্ষা উর্বর প্রদেশ। সেখানে গম ও কফি উৎপাদন হয়। হাজারা মাউথ ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে ধুনা গাছ পাওয়া যায়। আপেল,কমলা,লেবু,কলা,ইক্ষু,তরমুজ, লেবু প্রভৃতি পাওয়া যায়। বর্তমানে আরব দেশে প্রচুর পরিমাণে তেল উত্তোলিত হয়। এই তেল খনি গুলো বর্তমানে আরবের প্রধান সম্পদ।
প্রাচীন আরবের জীবজন্তু ও পশু পাখি
ইসলাম পূর্ব যুগে প্রাচীন আরবের জীবজন্তু ও পশু পাখি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে প্রভাব ছিল। চিতাবাঘ, নেকড়ে বাঘ, খেকশিয়াল, হায়েনা, গিরগিটি প্রভৃতি জীবজন্তুর মধ্যে প্রধান। শিকারি পাখির মধ্যে ঈগল, বাজপাখি, সেনপাখি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বুলবুল, কবুতর প্রভৃতি পাখি ও দেখা যায়। কুকুর, বিড়াল, ভেড়া, ছাগল প্রভিতি আরবের গৃহপালিত পশু।
উটঃ উট ছিল আরব দেশে আল্লাহর বিশেষ উপহার। উঠছিল যাযাবরদের নিকট ধাত্রীসম। P. K. Hitti বলেন "To him the camel is more than the ship of the desert."( বেদুইনদের কাছে উঠছিল 'মরুভূমির জাহাজের' চেয়েও অনেক বেশি)। খলিফা ওমর (রা) বলেছিলেন যেখানে উটের উন্নতি হয়েছে, কেবলমাত্র সেখানেই আরবদের অগ্রগতি ঘটেছে।
ঘোড়াঃ আরবের ঘোড়া পৃথিবী বিখ্যাত। বিত্তশালী আরব গন গোত্র কলহের সময় দ্রুত বেগে যাতায়াতের জন্য ঘোড়া ব্যবহার করত। এছাড়া খেলাধুলা, শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রেও ঘোড়ার প্রচলন ছিল।
ইসলাম পূর্ব যুগে প্রাচীন আরব জাতি ও অধিবাসী
আরবে আল বায়দা
আরবের আদিম অধিবাসীদের আরবে আল বায়দা বা প্রাচীন আরব বলা হয়। আরবে আল বায়দা বা প্রাচীন আরব কে ৫ ভাগে ভাগ করা যায় যথা
- আদ
- সামুদ
- তাছম
- জাদিম
- জারহাম ও আশালিকা বংশ
আরবে আল আরিবা
মূল বা আদি আরব গন ছিলেন কাহতানের বংশধর। সামের দুপুত্র কাহা তান ও আদনান। কাহ তানের বংশধর ইয়েমেনে তথা দক্ষিণ আরবের অধিবাসী এবং অপরজন আদনানের বংশধর গণ উত্তর আরবের অধিবাসী ছিলেন। কাহা তানের বংশধরদের হাতেই আরব জাতির প্রকৃত ইতিহাসের সূত্রপাত হয়।
আরবে আল মুস্তারিবা
উত্তর আরবের অধিবাসীদের আরবে আল মুস্তা রিবা বা বহিরাগত আরব নামে অভিহিত করা হয়। তারা হযরত ইব্রাহিম (আ) এর পুত্র ইসমাইল (আ) এর বংশধর। এছাড়া হযরত ইসমাইলের তিন পুত্রের নামানুসারে আদিনা নিও, নিজারিও বা মুদারিও নামেও চিহ্নিত করা হয়। হযরত মুহাম্মদ (স) এ বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
প্রাচীন আরবের অধিবাসী
অবস্থান ও বসবাস গত দিক থেকে আরবদেরকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়
- মরু বাসী আরবঃ মরবাসী আরবদের আহল উল জাদিয়া বা বেদুইন নামে অভিহিত করা হতো। আরবের প্রায়ই ৮০% অধিবাসী ছিল মরু বাসি বা যাযাবর। তারা পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে বসবাস করত। পরিবারের প্রধান গোত্রের প্রধান বা শেখ নির্বাচন করত। তারা গোত্র প্রীতি ও যুদ্ধ প্রীতির জন্য বিখ্যাত ছিল।
- শহরবাসী আরবঃ বেদুইন বা মরুবাসী আরবদের ন্যায় শহরবাসী আরবদেরও একই গোষ্ঠী কাঠামো বলবৎ ছিল। তবে তারা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করত। যাযাবরদের তুলনায় তারা ছিল সভ্য।
প্রাচীন আরবদের বৈশিষ্ট্য
ইসলাম পূর্ব যুগের প্রাচীন আরবদের বৈশিষ্ট্য তুলনামূলকভাবে আলাদা ছিল। আরবে দুই ধরনের নাগরিক ছিল। সমগ্র প্রাচীন আরবের২০% জনগোষ্ঠী ছিল শহরবাসী এবং বাকি ৮০% ছিল মরুবাসি। মরুবাসি যাযাবর আরবগণ লুণ্ঠন, শিকার, ও ডাকাতির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করত। আরবদের মাঝে গোত্রপ্রীতি ও গণতন্ত্র প্রীতি ছিল অত্যন্ত প্রখর। পরিবারের প্রধান হতেন পিতা।
শেখ গন সমবেতভাবে গোষ্ঠী গঠন করতেন। এভাবে গোষ্ঠী থেকে একটি উপজাতিতে পরিণত হতো। আরবের আবহাওয়া অত্যন্ত শুষ্ক। এখানে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রয়োজন মাফিক নয়। এ কারণে প্রাচীন আরবেরা অত্যন্ত কর্মীক, ধৈর্যশীল, রুক্ষ, দুঃসাহসিক আবার দুর্ধর্ষ। আরবদের মধ্যে কিছু মহত্ত্বের সুকুমার গুণাবলী বিদ্যমান ছিল।
আরও পড়ুনঃ প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ
তারা গোত্র ভিত্তিক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিল। নিজ গোত্রের প্রধানের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো। তারা নিজেদের অভিজাত ও সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বলে মনে করত। রক্তের বিশুদ্ধতা,বাগ্মীতা,কাব্য,তরবারি, ঘোড়া এবং বংশধারা নিয়ে আরবি ওদের মনে প্রচন্ড গর্ব ছিল।
ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের প্রাচীন রাজ্যসমূহ
আরব অধিবাসীদের জাতীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দুই ধরনের লক্ষ্য করা যায়। উত্তর আরবের বাসিন্দার সাথে দক্ষিণারবের বাসিন্দার জাতিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য ইসলামের আবির্ভাবের পরে বিদ্যমান ছিল। এ কারণে উত্তর আরব ও দক্ষিণ আরবের প্রাচীন রাজ্য গুলোকে আলাদাভাবে তুলে ধরা হলো। দক্ষিণ আরবের সাফাই অন্যান্য রাজ্য সমূহঃ
- সাবিয়ান রাজ্য
- মিনাই রাজ্য
- কাতাবান রাজ্য
- হাজরা মাউত
- হিমারাইট রাজ্য
আবিসিনিয়াদের শাসনকাল
ধর্মালম্বী অবিসিনি ওরা পবিত্র মক্কার ধর্মীয় অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনুধাবন করে মক্কার প্রতিদ্বন্দ্বী একটি তীর্থ কেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা করে। তীর্থ কেন্দ্র কে ভিত্তি করে রোজগার করতে ব্যর্থ হয়ে আবিসিনিও সম্রাট আব্রাহাম ৬০ হাজার সৈন্য নিয়ে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা আক্রমণ করেন। এই বছরটি ইসলামের ইতিহাসে হাতির বছর নামে পরিচিত।
এ যুদ্ধের পরিণতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআন শরীফের সূরা ফীল এ বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রাচীন আরবের সভ্যতা বিকাশের কারণ সমূহ
সভ্যতা বিকাশের কারণ সমূহ কে নানা জনে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন জনের মতামত 'সভ্যতার মতবাদ' নামে পরিচিত। সভ্যতার উৎপত্তি সম্পর্কে গবেষকরা যেসব তথ্য প্রদান করেছেন সেগুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় যথা
- ভৌগোলিক মতবাদ
- মাটির অবক্ষয়জনিত মতবাদ
- ভূ-প্রাকৃতিক মতবাদ
- যাযাবর মতবাদ এবং
- প্রতিকূলতা ও মোকাবিলা মতবাদ |
উপরের লিখিত কোন মতবাদ ই সভ্যতা সৃষ্টিতে সহায়ক নয়। অনুকূল জলবায়ু, অর্থনৈতিক অবস্থা, উর্বর ভূমি উত্তম প্রত্যাশ্রয়,এবং প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ সভ্যতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অনেকের মতে, ধর্মই পৃথিবীর প্রাচীন দর্শন ও বিজ্ঞানের পথিকৃৎ।
জাহেলিয়া যুগে প্রাচীন আরবের অবস্থা
আইয়ামে জাহেলিয়া শব্দ দুইটি আরবি শব্দ। আইএম শব্দটি ইয়াওমুন এর বহুবচন, এর অর্থ যোগ বা সময়। জাহেলিয়া শব্দের অর্থ অন্ধকার বা অজ্ঞতা। আইয়ামে জাহিলিয়া বলতে আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় অন্ধকার বা অজ্ঞতার যুগ। নীতিবোধ ও মানবতাবোধের অভাবে যে যুগে সমাজ ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অবস্থা অধঃপতনের
শেষ পর্যায়ে নেমে এসেছিল এবং ন্যায় ও সত্য পথে আহ্বানকারীর তীব্র প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল, সে যুগকে আইয়ামে জাহেলিয়া বলে।
আইয়ামে জাহিলিয়ার সময়
আইয়ামে জাহেলিয়া কত খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হয় এ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মত পাওয়া যায় । যেমন
- কোন কোন ঐতিহাসিক এর মতে, হযরত আদম (আ) হতে হযরত মুহাম্মদ(স) পর্যন্ত সময় কালকে আইয়ামে জাহিলিয়া বলা হয়।
- আরব ঐতিহাসিকদের মতে, হযরত ঈসা(আ) এর তীরধানের পর হতে ইসলামের আবির্ভাব এর পূর্বকাল পর্যন্ত সময় কে আইয়ামে জাহেলিয়া বলা হয়।
- ইউরোপীয় ঐতিহাসিক নিকল সনের মতে, ইসলামের আবির্ভাব এর পূর্ববর্তী এক শতাব্দী কালকে আইয়ামে জাহেলিয়া বলা হয়। ঐতিহাসিক পিকে হিটটি ও এ মত সমর্থন করে। তৃতীয় অভিমতটি মেনে নেওয়া যায়। কারণ হেজাজের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি অবস্থার বিশৃঙ্খলা প্রায় একশত বা তার কিছু বেশি কাল হতে শুরু হয়েছিল।
রাজনৈতিক ইতিহাসে ইসলাম পূর্ব যুগের আইয়ামে জাহিলিয়ার বিভিন্ন অবস্থা প্রাচীন আরবের উপর প্রভাব ফেলেছিল। যেমন- রাজনৈতিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থা, ধর্মীয় অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা ও সাংস্কৃতিক অবস্থা।
লেখকের মন্তব্য
সবশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক ইতিহাসে ইসলাম পূর্ব যুগে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ডামাডোলে পেটে ক্ষুধা নিয়ে আরবীয়রা যে বুদ্ধি ভিত্তিক আলোচনা করেছেন এবং কাব্য প্রকৃতি দেখিয়েছেন তা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। যার ফলে প্রাচীন আরবের উপর একটি বিশেষ প্রভাব পড়েছিল, যা আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করব।
আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে এ আর্টিকেলটি আপনাদের বন্ধু-বান্ধব সকলের কাছে শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url