প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ

প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ সম্পর্কে কি আপনি জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস পোস্টিতে প্রাচীন বাংলার উৎসের দুটি ভাগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।


প্রাচীন বাংলার ইতিহাস প্রাচীন যুগের লেখনী, গ্রন্থ, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রভৃতি উপাদানের মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে। তাই এগুলোকে প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের মূল উপাদান ধরা হয়ে থাকে। আপনি যদি প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

প্রাচীন ভারতের ন্যায় প্রাচীন বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠন ও সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। প্রাচীন যুগে লিখিত গ্রন্থাদি নেই বললেই চলে। যা আছে তার মধ্যে ইতিহাসের বিষয়বস্তু খুব বেশি নেই, আছে ধর্ম-কর্ম আর দেব দেবীর কথা। মানুষের কর্মকান্ড তার মধ্যে তেমন প্রাধান্য পায়নি। এই কারণে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনে ঐতিহাসিকদের নির্ভরশীল হতে হয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের উপর। 

প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের উপর ভর করে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে প্রাচীন যুগের বাংলার ইতিহাসের। তাই এ কথা বললে খুব একটা ভুল হবে না যে যদি আমরা কেবল গ্রন্থাকারে লিখিত উপাদানের ওপর নির্ভরশীল হতাম তাহলে আমরা প্রাচীন বাংলার ইতিহাস খুব কমই জানতে পারতাম। 

প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সমূহ প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান এবং গ্রন্থাকারে লিখিত উপাদান এই উভয় উৎস থেকে পাওয়া যায়। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সমূহ গ্রন্থাকারে কম পাওয়া গেছে প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে বেশি পাওয়া গেছে।

প্রাচীন বাংলার উৎসের দুটি ভাগ

প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথাঃ (১) গ্রন্থাকারে লিখিত উপাদান ও (২) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান। নিম্নে প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ দুটি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ 

গ্রন্থাকারে লিখিত উপাদান

প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ এর একটি উপাদান হলো গ্রন্থাকারে লিখিত উপাদান। প্রাচীন যুগের প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলার ভূখন্ডে লিখিত গ্রন্থ তেমন একটা নেই বললেই চলে। বাংলার বাইরে লিখিত কিছু গ্রন্থে বাংলা সম্পর্কে সামান্য কিছু তথ্য পাওয়া যায়। বৈদিক বা পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে বাংলার প্রাচীন জনপদ সমূহের নাম উল্লেখ পাওয়া যায় কিন্তু তেমন কোন বিস্তারিত তথ্য নেই। 

সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে রচিত কৌটিল্যের 'অর্থশাস্ত্র' গ্রন্থে বাংলা সম্বন্ধে বিবৃত তথ্য এ অঞ্চল সম্পর্কে প্রাচীনতম তথ্য। এই গ্রন্থে বাংলার সূক্ষ্ম সুতি বস্ত্রের উল্লেখ এ কথায় প্রমাণ করে যে বাংলার বয়ান শিল্পের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন এছাড়া অর্থশাস্ত্রে তেমন কোন তথ্য নেই।

ভারতবর্ষের ইতিহাসে গুপ্ত যুগ স্বর্ণযুগ বলে বিবেচিত হয়। এ যুগের অন্যতম কৃতিত্ব সংস্কৃত সাহিত্যের বিকাশ। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটলেও ইতিহাস সম্পর্কিত লেখনির তেমন কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে বাংলা গুপ্ত সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল, যার প্রমাণ অন্যান্য সূত্র থেকেও পাওয়া যায়।

সপ্তম শতাব্দীর প্রথম ভাগে উত্তর ভারতীয় সম্রাট হর্ষবর্ধনের সভাকবি বানভট্ট রচিত 'হর্ষচরিত' গ্রন্থে হর্ষবর্ধনের সাথে বাংলা সম্রাট শশাঙ্কের সংঘর্ষের কিছু বিবরণ পাওয়া যায়। তার বিবরণে হর্ষবর্ধনকে অতি উজ্জ্বল করে চিত্রিত করা হয়েছে। আর শশাঙ্ককে শত্রু হিসেবে হীন চরিত্রের অধিকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শশাঙ্কের ইতিহাস শত্রুপক্ষের লেখনীর উপরই নির্ভরশীল।

নবম-দশম শতাব্দীতে রচিত 'আর্যমঞ্জুশ্রীমলকল্প' গ্রন্থের বাংলার ইতিহাসের কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তবে এই গ্রন্থের সমগ্র উত্তর ভারতের ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে তাও আবার এক বিশেষভাবে। গ্রন্থকার সব নামের আদ্যা অক্ষর ব্যবহার করেছেন কখনো পুরো নাম ব্যবহার করেননি। হলে হয়তো জানা বিষয়ে কিছুটা সাহায্য পাওয়া যেতে পারে এই গ্রন্থ থেকে। 

কিন্তু অন্য সূত্র থেকে না পাওয়া তথ্য বোঝায় কঠিন। তবে এইসব অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও সপ্তম থেকে নবম শতাব্দীর সময়ের বাংলা ইতিহাসের বেশ কিছু তথ্য এই গ্রন্থ সরবরাহ করে।

দ্বাদশ শতাব্দীর সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত 'রামচরিতম' কাব্যে বাংলার পাল যুগের বিশেষ কিছু ঘটনা বিবৃত রয়েছে। শেষ পাল সম্রাট মদন পালের রাজত্বকালে রচিত এই গ্রন্থের দ্বিতীয় মহিপালের সময়ে সংঘটিত বরেন্দ্র বিদ্রোহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। দ্বিতীয় মহিপালের রাজত্বকালে বরেন্দ্রে 'উত্তর বঙ্গ' পাল শাসনের অবসান ঘটে, কৈবর্ত প্রধান দিব্যের বা দিব্যকের শাসন সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

পরে পাল সম্রাট রামপাল দিব্যের ভাইয়ের পুত্র ভীম কে পরাজিত করে বরেন্দ্র পুনরুদ্ধার করে পাল সম্রাজ্যের হৃদ গৌরব ফিরিয়ে আনেন। এসব ঘটনার জন্য 'রামচরিত' কাব্যই একমাত্র উৎস।

সেন যুগে বাংলায় সংস্কৃত সাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছিল। তবে অধিকাংশ রচনার ওই বিষয়বস্তু ছিল ধর্ম কর্ম, পূজা পার্বণ আর দান দক্ষিণা। প্রার্থী বিষয়ে খুব একটা স্থান পায়নি। তবে সেন যুগের কিছু কাব্য সংকলনে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা গ্রামীণ জীবনের কিছু ছবি বা অর্থনৈতিক অবস্থার সামান্য বিবরণ পাওয়া যায়। অল্প হলেও এ সব তথ্য সামাজিক ইতিহাসের অমূল্য উৎস।

বিদেশীদের বর্ণনা সব সময়ই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে প্রথম খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচিত কিছু গ্রীক ও লাতিন লেখনিতে বাংলা সম্বন্ধে সামান্য তথ্য পাওয়া যায়। এদের মধ্যে অজানা লেখকের 'পেরিপ্লাস অফ দি ইরিত্রিয়ান সী' গ্রন্থটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য গ্রিক ও লাতিন লেখনীতে বাংলার ভুভাগে 'গঙ্গা রিডাই' নামক শক্তিশালী রাষ্ট্রের এবং গাঙ্গে বন্দরের উল্লেখ পাওয়া যায়।

পঞ্চম থেকে সপ্তম শতাব্দীর মধ্যে বেশ কয়েকজন চৈনিক বৌদ্ধ পন্ডিত বাংলায় এসেছিলেন; তাদের ভ্রমণ বৃত্তান্তে বাংলা সম্বন্ধে তথ্য পাওয়া যায়। তবে এরা সবাই ভারতে এসেছিলেন বৌদ্ধ ধর্ম এবং রীতিনীতি সম্পর্কে সম্য জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে। দেশে ফিরে এরা সবাই স্বদেশবাসীকে জানাবার উদ্দেশ্যে তাদের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছেন। 

বাংলা সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য তার বৃত্তান্তে নেই। তাম্রলিপ্ত বন্দরের এবং ওই বন্দরের মাধ্যমে বা নিজের কিছু তথ্য তার লেখা বিবরণ থেকে পাওয়া যায়।

সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকে এসেছিলেন হিউয়েন সাং উত্তর ভারতীয় পুষ্যভূতি বংশের সম্রাট হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে। তিনি সম্রাট হর্ষবর্ধনের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে দীর্ঘকাল ভারতে কাটিয়েছেন। হর্ষবর্ধনের সমসাময়িক বাংলা সম্রাট ছিলেন শশাঙ্ক। শশাঙ্ক হর্ষবর্ধনের সংঘর্ষের কথা হিউয়েন সাং এর বিবরণে পাওয়া যায়। তবে স্বাভাবিক কারণে তিনি হর্ষবর্ধনের পক্ষ অবলম্বন করে বক্তব্য রেখেছেন। 

শশাঙ্কের মৃত্যুর পর হিউয়েন সাং বাংলায় এসেছিলেন। কর্ণসুবর্ণ হয়ে পুন্ড্রনগর সেখান থেকে কামরূপ হয়ে সমতট, তারপর তাম্রলিপ্তি থেকে উড়িষ্যার ভেতর দিয়ে গিয়েছিলেন দক্ষিণ ভারতের দিকে। প্রায় সমগ্র বাংলায় তিনি পরিভ্রমণ করেছিলেন। বাংলার এসব অঞ্চল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে তার বিবরণে। 

তিনি পুন্ড্রনগর ও আশপাশের এলাকায় বৌদ্ধ সংস্কৃতির নিদর্শনীর উল্লেখ করেছেন। তার দেওয়া তথ্যসমূহ সপ্তম শতাব্দীর প্রথমার্ধের প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

নবম থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে লিখিত আরব নাবিক ও ভৌগোলিকদের বিবরণে বাংলা সম্পর্কে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। 

এই সময়কালে ইউরোপ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সমুদ্র বাণিজ্যে আরবদের আধিপত্য ছিল। বাংলার উপকূল দিয়েই আরবদের বাণিজ্য তৈরি যাতায়াত করত। তাই আরবদের বর্ণনায় বাংলা সমৃদ্ধ বাণিজ্যের চিত্র পাওয়া যায়। বাংলার দক্ষিণ পূর্বাংশের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি চিত্র আরবদের বিবরণের উপরই নির্ভরশীল।

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে গ্রন্থাকারে লিখিত উৎসে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস খুব কমই পাওয়া যায় যা পাওয়া যায় তা বিক্ষিপ্ত এবং অপর্যাপ্ত।

প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান

প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ এর আরেকটি উপাদান হলো প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান। প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান গুলোকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নিম্নে এ তিন উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

অভিলেখমালাঃ প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান সমূহের মধ্যে অভিলেখমালায় প্রধান। তবে এদের মধ্যে তাম্র ফলকে উৎকীর্ণ ভূমি লেনদেন সংক্রান্ত দলিলাদি যা সাধারণভাবে তাম্র শাসন বলে অভিহিত হয়। তা আমরা শাসন ছাড়া রয়েছে বহু মূর্তি লিপি। প্রস্তর খন্ডে উৎকীর্ণ বেশ কিছু লিপির মধ্যে রয়েছে প্রশস্তি গাঁথা ও বিভিন্ন স্মারকলিপি। 

এই সব অভিলেখো মালায় বিবৃত তথ্য থেকে পুনর্গঠন হয়েছে প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের মূল কাঠামো। অভিলেখমালা সম্বন্ধে আলোচনার প্রারম্ভেই উল্লেখ করতে হয় বাংলার প্রাচীনতম লিপিটির। বগুড়া জেলার মহাস্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে একটি প্রস্তর খন্ডে ব্রাহ্মী লিপিতে উৎকীর্ণ অভি লেখটি বাংলার প্রাচীনতম লিপি প্রমাণ । 

সম্রাট অশোকের সময় কার ব্রাহ্মী লিপির সাথে এই অভি লেখটির মিল থাকায় খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর বলে সনাক্ত করেছেন। এই লিপিতে পুন্ড্র নগরের মহামাত্রের প্রতি রাজকীয় আদেশ লিপিবদ্ধ রয়েছে। আদেশের জনকল্যাণমুখী শাসনের স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। এই লিপি প্রাপ্তি থেকে মনে করা হয় যে বাংলার উত্তরাংশ মৌর্য সাম্রাজ্য ভুক্ত হয়েছিল। 

এবং খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে পুন্ড্রনগর মহাস্থান ছিল এ অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র। তাম্র শাসন সমূহের প্রশস্তি অংশই প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের প্রধান উপকরণ এ কথা বললেও বোধ হয় ভুল হবেনা। মোটকথা শাসন সমূহে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য ও প্রাচীন যুগের ইতিহাস পুনর্গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। 

তবে বাংলার প্রাচীন যুগে লিপি সমূহের একটা বৈশিষ্ট্য এই ব্যাপারে কিছু অসুবিধার সৃষ্টি করেছে। বাংলার অভি লেখ সমূহে সময়কাল উল্লেখিত হয়েছে রাজাদের রাজজানকে কোন নির্দিষ্ট সনে নয়। তাই রাজাদের সময়কাল নির্ধারণে অনেক ক্ষেত্রে লিপিতাত্ত্বিক বিচারের সাহায্য নিতে হয়।

মুদ্রাঃ বাংলার প্রাচীন যুগের ইতিহাস পুনর্গঠনে মুদ্রা সাহায্যকারী ভূমিকা পালন করে। এই অঞ্চলে ছাপাঙ্কিত মুদ্রার প্রচলন ছিল। কুষাণ পরবর্তী যুগ থেকে ছাচে ঢালা মুদ্রার ব্যবহার দেখা যায়। সমগ্র বাংলার বিভিন্ন জায়গায় গুপ্ত সম্রাটদের সংখ্যায় আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলার সম্রাট শশাঙ্কের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে। 

দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বেশ কিছু স্থানীয় রাজাদের রৌপ্য ও মুদ্রা পাওয়া গেছে । তবে বাংলার পাল বা সেন বংশের রাজাদের কোন মুদ্রা আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।

মুদ্রা সার্বভৌমত্বের পরিচয় বহন করে। তবে যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা সূচক হিসেবে মুদ্রাকে ধরা যায়। গুপ্ত যুগে বাংলার সমৃদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায় ওই যুগের বিপুল সংখ্যক মুদ্রা প্রাপ্তি থেকে। দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় রৌপ্য মুদ্রা প্রিয় অঞ্চলের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির পরিচয় বহন করে।

পাল সেন শাসনামলের মুদ্রার অনুপস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এ কথায় বলা যায় যে ওই সময়ে বাংলার অর্থনীতি ছিল কৃষি নির্ভর সাথে তেমন একটা বাণিজ্য ছিল না। অন্তর ভারতীয় যে বাণিজ্য ছিল তা সম্ভবত পূর্বের স্বর্ণ বা রূপমুদ্রা ব্যবহার করেই চলতো পাল বা সেন রাজারা নিজেদের মুদ্রা জারি করার প্রয়োজন বোধ করেনি। 

তবে এ কথা বলতেই হয় যে প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ পুনর্গঠনে মুদ্রা সম্পূরক ভূমিকা পালন করে।

প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষঃ প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্ঘাটনের ফলে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস এখন অনেক সমৃদ্ধ। বিগত অর্ধ শতাব্দীর ও অধিক সময়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবাংলায় প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের এর ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল। এইসব আবিষ্কার বাংলা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইতিহাসের অনেক নতুন উপকরণ সংযোজন করেছে। 

তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

বর্তমান বাংলাদেশের মধ্য বগুড়া জেলার মহাস্থান, নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর, নরসিংদী জেলার ওয়ারী-বটেশ্বর এবং কুমিল্লা জেলার ময়নামতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য । মহাস্থানে আবিষ্কৃত হয়েছে বাংলাদেশের প্রাচীনতম নগর, পুন্ড্রনগরের ধ্বংসাবশেষ। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বাংলার ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ের সংস্কৃতির ঐতিহ্যের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। 

মহাস্থানে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নসামগ্রীতে। করোতোয়া নদীর ধারে গড়ে উঠেছিল সমৃদ্ধনগর সভ্যতা। প্রাচীন যুগের শিল্পকলার ভাস্কর্য, পোড়ামাটির ফলক, স্থাপত্য নিদর্শনাদি উদঘাটিত হয়েছে এই প্রত্নস্থলে।

এইসব প্রত্ন স্থান উদঘাটনের ফলে প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের কঙ্কাল সার্ক কাঠামত সংযোজিত হয়েছে রক্তমাংস। অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক এবং লিখিত উপাদান থেকে নির্ভর করে যে ইতিহাস পুনর্গত হয়েছে তা অনেকটা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে প্রশ্ন খননে প্রাপ্ত নিদর্শনাদির আলোকে। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস এখন অনেকটা স্পষ্ট। তবে স্থান বিশেষে যে এখনো অস্পষ্টতা বিরাজ করেছে সে কথা স্বীকার করতেই হয়।

লেখকের মন্তব্য

প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের ওপর অধিক নির্ভরশীলতার কারণে প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই ঐতিহাসিকদের মধ্যে স্বাভাবিক কারণে রয়েছে মতানৈক্য। তাছাড়া সমাজ বা অর্থনৈতিক জীবনের অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়না উৎসের অভাবে। 

নতুন উৎসের আবিষ্কার বদলে দেয় অনেক ধারণাকে। তাই ইতিহাস পুনর্গঠন এর প্রক্রিয়া চলছে অবিরত।আমার আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলের কাছে শেয়ার করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url