লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপায়
প্রিয় পাঠক আপনি কি লিভারের অতিরিক্ত চর্বি সমস্যায় ভুগছেন। লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপায় সম্পর্কে সঠিক তথ্যটি খুঁজছেন তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই আর্টিকেলে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণ, লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার লক্ষণ প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপায় সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন।
লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপায় সম্পর্কে এই আর্টিকেলে লিখা হয়েছে। তাই এই আর্টিকেলটি না টেনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপায় সম্পর্কে।
ভূমিকা
আমাদের দেশে অনেক মানুষই ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছে। শুধু বড়দের ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হচ্ছে তাই নয় ছোট বাচ্চাদের ও এই সমস্যা হচ্ছে। ফ্যাটি লিভার নিরবে শরীরের অনেক ক্ষতি করে। ফ্যাটি লিভার বা লিভারে অতিরিক্ত চর্বি "হেপাটিক স্টেটসিস" নামে পরিচিত। যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে ফ্যাটি লিভার বা লিভারে অতিরিক্ত চর্বি বলে।লিভারে অল্প পরিমাণ চর্বি থাকা স্বাভাবিক কিন্তু অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়ে যায়।তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানো প্রয়োজন। লিভারে চর্বি যেমন একদিনে হয়নি ঠিক তেমনি একদিনে কমবেও না। তাই ধৈর্য্য ধরে লিভারের চর্বি কমানোর নিয়ম অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানো যাবে।
লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণ
লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আগে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণ সম্পর্কে জানতে হবে। লিভারে অতিরিক্ত চর্বি দুই কারণে হয়ে থাকে। একটি হলো অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার অন্যটি হলো নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। এই দুই ধরনের কারন সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হয় সে সকল ব্যাক্তিদের যারা নিয়মিত অ্যালকোহল পান করে থাকে। অ্যালকোহল নিয়মিত পান করার অভ্যাসের কারণে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বা লিভারে অতিরিক্ত চর্বি হয়ে থাকে।
- নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হয় সে সকল ব্যাক্তিদের যারা অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করে, অতিরিক্ত চিনি, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, মুখোরচক অস্বাস্থ্যকর খাবার, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহন, কার্বোহাইড্রেট, অতিরিক্ত তেল মশলা যুক্ত খাবার গ্রহনের কারণে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে। ডায়াবেটিস বা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে, বিভিন্ন স্টেরয়েড ঔষধ গ্রহণ করলেও ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট বয়সের পর বংশগত কারণেও ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষের নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বা লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার সমস্যা হয়ে থাকে যা পরবর্তীকালে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরতে হয় বিভিন্ন রকমের অসুখের মাধ্যমে।
লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার লক্ষণ
অনিয়মিত খাদ্যাভাসের কারণে লিভারে চাপ পরে, ফলে হজমে সমস্যা হয় ও খাবার খেতে অরুচি লাগে। লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপায় গুলো জানার আগে আমাদেরকে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানা দরকার। নিম্নে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার লক্ষণ গুলো কি কি তা দেওয়া হলোঃ
- হঠাৎ করেই ওজন বেড়ে যেতে পারে।
- লিভারে অতিরিক্ত চর্বি হলে শরীরের থেকে পেট অনেক ফুলে যায়।
- লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমলে খাবারে অরুচি হয়।
- কোন খাবার খেলে তা সহজে হজম হয় না। হজম ক্রিয়া কমে যেতে থাকে।
- খাবার সময় বমি বমি ভাব হতে পারে।
- ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হলে মাথাব্যাথা, মন খারাপ বা ডিপ্রেশন হতে পারে।
- পেট ফুলে যাওয়ার সাথে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ ফুলে যেতে পারে।
- অ্যাসিডিটি বা গ্যাস এর সমস্যা হয়ে থাকে বুক পেট জালাপোড়া করে ও ব্যাথা করে।
- ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হলে পেটের ডানদিকে লিভারের জায়গাটুকু ব্যাথা করে।
আরও পড়ুনঃ ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানো সম্পর্কে।
লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে যে সকল কাজ করণীয়
লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে একটি উপায় হল লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে যে সকল কাজ করণীয় সেগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে যে সকল কাজ করণীয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
- অনিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করা বাদ দিতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক জীবন পরিচালনা করতে হবে। সময়ের খাবার সময়ে খেতে হবে ও সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে।
- প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম করতে না পারলে হাটতে হবে ৩০ মিনিট জোরে।
- চর্বি জাতীয় কোন খাবার খাওয়া যাবে না। গরুর মাংস, খাসির মাংস ও হাসের মাংস খেলেও দুই পিচ কিন্তু সলেট মাংস খেতে পারবে তবে মাসে একবার।
- ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, মুখরোচক ভাজাপুরা খাবার ও প্যাকেটজাত খাবার চিপস, চকলেট, জুস, চানাচুর ইত্যাদি জাতীয় খাবার খাওয়া পরিহার করতে হবে।
- বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া হারাম করে দিতে হবে। কারণ এগুলো খাবার খেয়ে বিভিন্ন রকমের অসুখ হয়ে থাকে ফ্যাটি লিভারের পাশাপাশি।
- মদ বা অ্যালকোহল, চিনিযুক্ত ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না যেমন ক্যান্ডি, বিস্কিট, বিভিন্ন রকমের ফলের রস ও মিষ্টি থেকে দূরে থাকুন।
- চা, কফি কনডেন্সড মিল্ক বা ফুল ক্রিম দুধ দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে। ঘন দুধের খাবার ও ফুলক্রিম দুধের তৈরী বিভিন্ন খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে।
- সোডিয়াম প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রামের সাথে সীমাবদ্ধ রাখেন। বেশি পরিমাণে লবণ খেলে আপনার শরীরে পানি ধরে রাখতে পারে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন এবং প্রতিদিন হাটতে চেষ্টা করবেন।
- ইনসুলিন্স হরমোন ব্যালেন্স ঠিক রাখতে হবে। ইনসুলিন্স হরমোন ব্যালেন্স ঠিক থাকলে লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানো যায়।
লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে যে সকল খাবার খাবেন
লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপায় গুলোর আরেকটি উপায় হচ্ছে ভালো খাবার খাওয়া। লিভারের চর্বি কমাতে হলে ও তেল মুক্ত খাবার খেতে হবে লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে যে সকল খাবার খাবেন নিম্নে তা আলোচনা করা হলোঃ
- লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর জন্য প্রচুর তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে।
- উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন- খোসাসহ ফল, বিভিন্ন রকমের সবজি। খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন ১০-১৫ গ্রাম দ্রবণীয় খাদ্য আঁশ গ্রহণ করলে লিভারের চর্বি কমার পাশাপাশি লিভারের এনজাইম মাত্রা স্বাভাবিক হওয়া ছাড়াও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
- খাদ্য তালিকায় নিয়মিত অলিভ অয়েল, বাদাম ও অ্যাভোকাডো রাখুন এগুলো মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। গবেষণায় দেখা গেছে, মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড লিভারের চর্বি কমাতে সহায়তা করে।
- যে সকল ব্যাক্তির ফ্যাটি লিভারে অতিরিক্ত চর্বি আছে তারা ঘরে তৈরী মাঠা বা ছানার পানি নিয়মিত পান করবেন। লিভারের চর্বি ও লিভার এনজাইমের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হয়ো প্রটিন ( দুধের প্রটিন ) সহায়তা করে।
- ব্লাক কফি ও গ্রিন টি প্রতিদিন সারাদিনের মধ্যে দুই থেকে তিনবার পান করতে পারেন পানীয় হিসাবে। ব্লাক কফিতে থাকা অ্যানটিঅক্সিডেন্ট ও কিছু যোগ লিভারে ফ্যাট জমা হতে দেয় না। গ্রিন টিতে থাকা অ্যানটিঅক্সিডেন্ট যা 'ক্যাটেকাইন' নামে পরিচিত লিভারে চর্বি কমাতে সহায়তা করে।
- যাদের অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা সপ্তাহে অন্তত দুই দিন তৈলাক্ত মাছ ইলিশ, টুনা, কড মাছ, সারডিন খাদ্য তালিকায় রাখুন। এগুলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ। লিভারে এনজাইমের সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে ও লিভারে অতিরিক্ত চর্বি গঠনে বাদা দিয়ে থাকে তৈলাক্ত মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড।
- লিভার বা যকৃত ভালো রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি পান করা। দৈনন্দিন জীবনে ২-৩ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
- বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে, যে সকল ব্যাক্তির নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে সে সকল ব্যাক্তিরা যদি নায়মিত আখরোট খায় তাহলে তাদের লিভার ফাংশন উন্নত হবে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
- ভিটামিন ই ও অ্যানটিঅক্সিডেন্ট লিভার ড্যামেজ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। সূর্যমুখীর বীজে ভিটামিন ই ও অটিঅক্সিডেন্টের উৎস।তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন সূর্যমুখীর বীজ।
- লাল গমের রুটি ও লাল চালের ভাত খাওয়ার অভ্যাস করুন।
লেখকের মন্তব্য
উপরিউক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে আসা করি খুব সহজেই লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমবে। আশা করি লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপায় সম্পর্কে আর্টিকেলটি পড়ার পরে লিভারের সমস্যা নিয়ে আর ভয় করবেন না। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন সচেতন হন, নিজের লিভার নিজেই ভালো রাখার চেষ্টা করুন। আমার এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url