বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
আপনি কি বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটিতে তথ্যপ্রযুক্তি কি, তথ্য প্রযুক্তির উপাদান সমূহ, বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, যোগাযোগ প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে আপনি বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে হলে আমার এই আর্টিকেলটি না টেনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
বর্তমান আধুনিক বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। আর এর প্রেক্ষিতে বিশ্বের সাথে বাংলাদেশও তাল মিলিয়ে চলছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে। তাই আমার আজকের আর্টিকেলের বিষয় হলো বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আর্টিকেলটি না টেনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। শিল্প বিপ্লবের পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন পৃথিবীতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নজিরবিহীন উন্নতির ফলে গোটা বিশ্ব আজ গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি যেকোনো অসাধ্যকে সাধন করেছে । যে যাতে তথ্য ও প্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত। আধুনিক বিশ্বের যেদিকেই তাকানো হয় না কেন সেদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সমারোহ। বিশ্বের যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজ অবস্থান
সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
তথ্যপ্রযুক্তি কি
তথ্যপ্রযুক্তি বলতে সাধারণত তথ্য রাখা এবং একে ব্যবহার করার প্রযুক্তিকেই বোঝানো হয়। একে ইনফরমেশনস টেকনোলজি (IT)নামে অভিহিত করা হয়। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি তে তথ্যপ্রযুক্তিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে-
"The branch of technology concerned with the dissemination, processing and storage of information, especially by means of computer".
আমেরিকান গণিতবিদ কে তথ্যপ্রযুক্তির জনক হিসেবে অভিহিত করা হয় যার নাম ক্লাউডি এলউড শ্যানন (Claude Elwood Shannon)। কম্পিউটার এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ, একত্রিকরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিনিময় বা পরিবেশন এর ব্যবস্থাকে তথ্যপ্রযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
আরও পড়ুনঃ প্রকল্প ভিত্তিক শিক্ষা কি?
তথ্য প্রযুক্তির উপাদান সমূহ
তথ্য প্রযুক্তির উপাদান সমূহ যেগুলো মৌলিক উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলো নিম্নে দেওয়া হলো:
- কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি
- কম্পিউটিং
- রেডিও, টেলিভিশন, ফ্যাক্স
- অডিও-ভিডিও
- স্যাটেলাইট
- কম্পিউটার নেটওয়ার্ক
- ইন্টারনেট
- আধুনিক টেলিযোগাযোগ
- মডেম ইত্যাদি
তথ্যপ্রযুক্তির অবদান
আধুনিক সভ্যতা ক্রম বিকাশে তথ্য প্রযুক্তির অবদান অপরিসীম। নিম্নে তথ্যপ্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য অবদান গুলো দেওয়া হল:
- অপচয় রোধ করে এবং সময় সাশ্রয়ী হয়।
- পণ্যের প্রাপ্যতা সহজ হয়।
- তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব হয়। ফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, ইমেইল, এসএমএস, এমএমএস প্রভৃতি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
- প্রশিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের গতিকে ত্বরান্বিত করে।
- সর্বক্ষেত্রের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
- ব্যবসা- বাণিজ্যে লাভজনক প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে।
- ই-কমার্স এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা যায়।
- ঘরে বসে এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জিনিসের অর্ডার দেওয়া যায়।
- শিল্প প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার মনুষ্য শক্তির অপচয় কমায়।
- মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটায়।
- ঘরে বসেই অনলাইনে বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাগ্রহণ করা যায়।
- ই -গভর্নেন্স চালুর মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো যায়।
- সিটিজেন চার্টার এর মত নাগরিক সুবিধাগুলো ঘরে বসেই পাওয়া যায়।
- ঘরে বসে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফোন ইত্যাদির বিল দেয়া যায়।
উন্নয়ন সম্পর্কে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ভবিষ্যতের জাতীয় উন্নয়নের নেতৃত্ব দেবে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিপ্লব ঘটাবে। ইন্টারনেট পরিষেবা বা ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মতো ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ অনেক দেশের অর্থনীতিতে চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে।
বিশ্ব গ্রামের ধারণা
গ্লোবাল ভিলেজ অর্থ বিশ্বগ্রাম। গ্লোবাল ভিলেজ হল প্রযুক্তি নির্ভর একটি বিশ্ব যাতে বিশ্বের সব দেশ সব জাতি একটি গ্রামের মতো সুবিধা পায় বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বের পরিধি আজ ছোট হয়ে এসেছে। বৃহৎ প্রেক্ষাপটে সে হিসেবে বিশ্ব টাই হলো একটি গ্রাম। অন্য কথায় পৃথিবী একটি একক পরিবার। বিশ্ব গ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ বলতে এমন একটি ধারণাকে বুঝানো হয়
যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন পরস্পরের সাথে সহজ যাতায়াত ও ভ্রমণ গণমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যম যুক্ত থাকে এবং একক কমিউনিটিতে পরিণত হয়। বিশ্বগ্রামে আজকাল বিশ্বের এক প্রান্তের লোক অন্য প্রান্তের লোকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আজকের বিশ্বে আমরা মূলত একটি বিশ্ব গ্রামে বসবাস করছি।
যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, অফিস, বাসস্থান, ব্যবসা, বাণিজ্য, সংবাদ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ সাংস্কৃতিক উপাদান বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিশ্বগ্রামের বহুল প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন এখন বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
আরও পড়ুনঃ সমস্যা ভিত্তিক শিক্ষা কেন গুরুতবপূর্ণ?
বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার উপাদান সমূহ
বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার উপাদান সমূহ নিম্নে দেওয়া হল:
- হার্ডওয়ারঃ বিশ্বগ্রাম এ যে কোন ধরনের যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য সর্বপ্রথম যেটি প্রয়োজন তাহলে উপযুক্ত হার্ডওয়ার সামগ্রী।
- সফটওয়্যারঃ সফটওয়্যার এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজিং সফটওয়্যার, কমিউনিকেটিং সফটওয়্যার এবং প্রোগ্রামিং ভাষা।
- ইন্টারনেট সংযুক্ত বা কানেক্টিভিটিঃ নিরাপদ তথ্য আদান প্রদানয় হচ্ছে বিশ্বগ্রামের মূল ভিত্তি। এক্ষেত্রে টেলিকমিউনিকেশন, ব্রডকাস্টিং এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইন্টারনেট কানেকশন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
- ডাটাঃ ডাটা হচ্ছে 'Fact' যা এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। বিশ্বগ্রামের ডাটা ও তথ্যকে মানুষ তার প্রয়োজনে একে অপরের সাথে বিনামূল্যে বা অর্থের বিনিময়ে শেয়ার করতে পারে।
- মানুষের জ্ঞান বা সক্ষমতাঃ বিশ্বগ্রাম মূলত তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। তাই মানুষের সচেতনতা ও সক্ষমতার ওপর এর সুফল নির্ভর করছে।
যোগাযোগ
তথ্যপ্রযুক্তির ক্রোম বিকাশের ফলে এখন তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে। মূলত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে এটি সম্ভব হচ্ছে। ফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, ইমেইল, অডিও-ভিডিও, চ্যাটিং, এসএমএস, এম এম এস এবং ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে।
রেডিও সার্ভিস এর অনুষ্ঠান সমূহের মাধ্যমে আজ পাড়া গাঁয়ের যেকোনো ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন ধরনের খবরাখবর পাচ্ছে। যোগাযোগের আরেকটি মাধ্যম হলো যাতায়াত ব্যবস্থা। আজকাল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে wi-fi, ওয়ারলেস, ব্লুটুথ, GPRS এর মত আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রকারভেদ
বিশ্বগ্রামের সুবিধা সমৃদ্ধ যোগাযোগ ব্যবস্থা বা কমিউনিকেশন সিস্টেমকে আলোচনার সুবিধার্থে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-
1.টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা: টেলিযোগাযোগ হলো সাধারণভাবে যেকোনো দূরত্বে যন্ত্র বা ডিভাইস নির্ভর পরস্পর যোগাযোগের পদ্ধতি। টেলিযোগাযোগ এর ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ডিজিটাল টেলিফোন নেটওয়ার্ক, মোবাইল কম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট।
2.তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা: ইন্টারনেট বিশ্বগ্রামের তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন এক নিরাপদ ও নির্বিচ্ছিন্ন ধারা সৃষ্টি করেছে যে মানুষ তার প্রয়োজনীয় যে কোন তথ্য নিজের পার্সোনাল লিভাইস গুলো থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সংগ্রহ করতে এবং পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে প্রয়োজন মত সরিয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছে। বিশ্বগ্রামের এই তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ গুলো হল ইন্টারনেট, ইমেইল, টেলিকনফারেন্সিং, ভিডিও, কনফারেন্সিং ও বুলেটিন বোর্ড।
3.প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বা যাতায়াত ব্যবস্থা: প্রত্যক্ষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি যে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগিক ব্যবহৃত হয় সেগুলো হল:
- রিজার্ভেশন সিস্টেম: যে সিস্টেম ব্যবহার করে দূর-দূরান্ত থেকে বরাদ্দ কাজ সম্পন্ন করা যায় সেটি হল রিজার্ভেশন সিস্টেম। বাংলাদেশ বিমান ও রেলওয়ে কম্পিউটার ভিত্তিক ও রিজার্ভেশন ব্যবস্থা ব্যবহার করে থাকে।
- জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম: জিপিএস ব্যবস্থা নির্ভর বাংলাদেশী একটি জনপ্রিয় সেবা হল ট্রেনের অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকে জানতে পারা। জনপ্রিয় এ সেবাটি বাংলাদেশের গ্রামীণফোন ও রেলওয়ের যৌথ ব্যবস্থাপনায় জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রদান করা হয়ে থাকে।
- জিওগ্রাফিক ইনফর্মেশন সিস্টেম: বিভিন্ন অঞ্চলের অবকাঠামগত সমস্যা পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ নগরায়ন ও আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরিতে জিআইএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশের জি আই এস এর ব্যবহার খুব সাম্প্রতিক হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে ভূমি ব্যবহার, আদমশুমারি, নগর পরিকল্পনা, বন, পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস উত্তোলন শিল্প, বিভিন্ন সেবা খাত, পরিবহন ব্যবস্থা সহ আরো অনেক ক্ষেত্রে জিপিএস প্রযুক্তি আজকাল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে কর্মসংস্থান
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে কর্মসংস্থান অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রধানতম হাতিয়ার হচ্ছে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট। এ প্রযুক্তি সমূহ কর্মসংস্থানের বিশাল বাজার উন্মুক্ত করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত ক্ষেত্র গুলোর বিকাশে ব্যাপক সহায়ক হয়ে উঠেছে।
1. ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং: প্রচলিত ব্যবস্থায় কোন কর্মীকে স্ব শরীরে কর্মস্থানে গিয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন বিশ্বের যে কোন দেশের যেকোনো কর্মী অন্য যে কোন দেশের কর্মদাতার কাজ ঘরে বসে করতে পারেন। এবং তার কাজের পেমেন্ট অনলাইনে গ্রহণ করতে পারেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বায়ার গন তাদের কাজগুলো সস্তায় অন্য দেশের কর্মীদের মাধ্যমে অনলাইনে করিয়ে নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে দেশে আসছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন নয় এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে দেশের বিপুল সংখ্যক প্রশিক্ষিত বেকার দক্ষ জনগোষ্ঠীর।
2.উদ্যোক্তা উন্নয়ন: সাম্প্রতিক সময়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে চাকরি করার মানসিকতা থেকে বের হয়ে নিজে কিছু একটা করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠছে তরুণ সমাজ। উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমে সর্বাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভব। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ অনেক নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বিকাশ, মোবিকাশ, কিউক্যাশ প্রভৃতি সাহায্যে দেশে যেকোন স্থানে দ্রুত অর্থ আদান-প্রদানে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে ক্ষুদ্র উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের বহুমুখী ক্ষেত্র সৃষ্টি করা হয়েছে।
3.অনলাইন মাধ্যমে চাকুরীর সুযোগ: অফিসে অফিসে ঘুরে চাকরি খোঁজার দিন বাংলাদেশের ক্রমে ফুরিয়ে আসছে। কেননা এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিদাতাদের সম্মেলন ঘটানো যায়। এ ধরনের বিভিন্ন অনলাইন জব পোর্টাল হল:bdjobs.com, ajkerchakri.com প্রভৃতি এমনকি যে কেউ ওই সমস্ত জব পোর্টাল গুলিতে বিনামূল্যে সদস্য হয়ে এর মাধ্যমে ওই সমস্ত চাকুরীর জন্য দরখাস্ত করতে পারে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্লগ তৈরি
বর্তমান বিশ্বে যে কোন প্রকারের শ্রেণীর মানুষ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্লগ তৈরি করছেন। ব্লগ এক ধরনের অনলাইন ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ব্যক্তি কেন্দ্রিক পত্রিকা হিসেবে পরিচিত। যিনি ব্লগে পোস্ট করেন তাকে ব্লগার বলা হয়। ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ব্লগ সাইটে আপডেট কনটেন্ট যুক্ত করেন আর ব্যবহারকারীরা সেখানে তাদের মন্তব্য যোগ করতে পারেন।
আমেরিকান বিখ্যাত উদ্যোক্তা "রিচার্ড ম্যাথিউ স্টলম্যান" হলেন ব্লগিং ধারণার প্রতিষ্ঠাতা। সাম্প্রতিক ঘটনা সমূহ নিয়ে এক বা একাধিক ব্লগার নিয়মিত তাদের ব্লগ হালনাগাদ করে থাকেন।
বর্তমানের আলোকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
বর্তমান যুগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গতিবিধি আধুনিক পৃথিবী তথা ব্যক্তিগত জীবনের সর্বত্র। আধুনিক শহুরে জীবনের সম্ভবত এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে আজকাল তথ্যপ্রযুক্তির আধিপত্য বিস্তার লাভ করেনি। সময় যতই এগোচ্ছে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্ব পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
সে সঙ্গে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ঘটিয়ে চলেছে। জীবনে সর্বক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রভাব ও অনুভূত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন নিত্য নতুন আবিষ্কার বর্তমান চিকিৎসা ও শিক্ষাব্যবস্থাকে আমূল বদলে দেওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে । চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন জটিল রোগ নির্ধারণ ও তার সমাধান সহজে দ্রুতগতিতে এবং নির্ভুলভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
এবং তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিত্যনতুন আবিষ্কার গুলি আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টেলিজেন্স এর প্রয়োগের ফলে শিক্ষাকে অনেক বেশি বাস্তবমুখী এবং যথাযথ করে তোলা সম্ভব হচ্ছে।
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা
২০১৪ সালে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের শত বছর পূর্তি হয় তবে দীর্ঘ সময়ও বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোকে দায়ী করা যায় তা হল:
- দুর্বল অবকাঠামো।
- বিদ্যুতের ঘাটতি।
- তথ্যপ্রযুক্তির যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা ও আমদানি নির্ভরতা।
- পরিকল্পনার অভাব।
- তথ্যপ্রযুক্তি সেবায় ব্যয়বহুলতা।
- তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষার অভাব।
- সচেতনতার অভাব।
- তথ্যপ্রযুক্তি সেবার শহরকেন্দ্রিক।
- ইন্টারনেট সুবিধা প্রত্যন্ত এলাকাতেও পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
- সরকারি ও বেসরকারি কাজে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিষ্ঠানসমূহের বিশেষ সুযোগ দান।
- তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ট্যাক্স রহিতকরণ সময়সীমা বাড়ানো ।
- ই-কমার্স ভিত্তিক পণ্য ও সেবা লেনদেন ভ্যাটের আওতাভুক্ত রাখা ।
- তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ।
- শেয়ার মার্কেট তথা আইজিও তে আইটি কোম্পানির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
লেখকের মন্তব্য
পরিশেষে বলা যায় যে বর্তমান বিশ্বে যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ ঘটেনি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণ, শিক্ষার উন্নয়ন, চিকিৎসার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদের নানান পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
যেহেতু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতপ্রসার মান ও মূল্যবান শিল্প তাই একবিংশ শতাব্দীর জটিল ও কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে প্রতিযোগিতা মূলক এ বিশ্বের টিকে থাকতে হলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশের কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বপরি মন্ডলে
নিজ অবস্থান সুধীর ও উজ্জ্বল করতে সক্ষম হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজন সকলের কাছে শেয়ার করে দিবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url