জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব সমূহ এবং এর ব্যবহার

তথ্য ও প্রযুক্তি প্রিয় পাঠক আপনি কি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব সমূহ এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে।


পোস্টসূচিপত্রজেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব সমূহ এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে আপনার জ্ঞানকে বর্ধিত করার লক্ষ্যে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রয়োজন সমূহ এবং এর ব্যবহার সম্বন্ধে জানতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কি এবং রিকমিনেট ডিএনএ প্রযুক্তি কি ও এর ধাপসমূহ। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। দেশে ধান, পাট, আঁখ প্রভৃতি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিনিয়ত উন্নত মানের সার বীজ আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

তারা ব্যাপক সফলতাও অর্জন করেছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ বাংলাদেশের বিশেষ সাফল্য হলো পাটের জীবন রহস্য বা জিনোম সিকোয়েন্সের আবিষ্কার। বাংলাদেশের প্রখ্যাত জিন তত্ত্ববিদ ডক্টর মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট গবেষণা কেন্দ্র এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডেটা সফট এর একদল তরুণ উদ্যমে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের  
যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ এর মাঝামাঝিতে পাটের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কৃত হয়। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রায়োগিক ব্যবহারের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে কৃষি ক্ষেত্রে অনেক উন্নত হয়েছে। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রাকৃতিক গুরুত্ব সমূহ এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কি?

কোন জীব থেকে একটি নির্দিষ্ট দিন বহনকারী DNA(Deoxyribonucleic acid) পৃথক করে ভিন্ন একটি জীবের স্থানান্তরের কৌশলকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কে জেনেটিক মেডিফিনেশন(Genetic modification/Manipulation-GM) ও বলা হয়। অথবা জিন/ডিএনএ পরিবর্তন করার কৌশল কে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলে। 

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত ট্রান্সজেনিক উন্নত (বৈশিষ্ট্যধারী) উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টিতে কাজ করে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সম্ভবত প্রাণীর বিকাশের মূলে নিহিত রয়েছে ডিএনএ এর জেনেটিক কোড। ডিএনএ হল জীবদেহের নীল নকশা। ডিএনএতে সংরক্ষিত অন্যের উপর জীবদেহের জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে। 

জীবদেহের ডিএনএ এর বিভাজিত একক বৈশিষ্ট্যকে জিন বলা হয়। ১৯৭০ সালে আণবিক কাজী নামে সমাদ্রিত রেস্ট্রিকশন এনজাইম (যা দিয়ে ডিএনএ অনু কাটা যায়) আবিষ্কারের পর মূলত জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর যাত্রা শুরু হয়। জ্যাক উইলিয়ামসন(Jack Williamson) এর লেখা আইল্যান্ড নামক সাইন্স ফিকশন গল্পে সর্বপ্রথম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং 

টার্মটি সাইন্স ফিকশন টার্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে আধুনিক বিজ্ঞানে এর সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।

রিকম্বিনেট DNA প্রযুক্তি কি?

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে যে সকল কৌশল অবলম্বন করে এক জীবের কোচ থেকে অন্য জীবের স্থানান্তর করা হয় তাদেরকে একত্রে রিকম্বিনেট DNA প্রযুক্তি বলা হয়। এ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে DNA সুত্রের কাঙ্ক্ষিত খন্ড বা অংশ ক্ষুদ্র এককোষী আবাদী জীব তথা ব্যাকটেরিয়া থেকে মানবদেহে উদ্ভিদ কোষ থেকে প্রাণীদেহে এবং প্রাণী কোষ থেকে উদ্ভিদ দেহে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়েছে। 

আর এ কাজ সফল করতে কোন এক জীবের DNA (জেনেটিক পদার্থ) কে এমনভাবে পরিবর্তিত করা হয় যাতে তার নিজস্ব জ্বীনের কাজ করার ক্ষমতার লোভ পায় কিংবা ভিন্ন কোন জীবের জেনেটিক পদার্থের সাথে মিশে নতুন জিন বা বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই অসংখ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ঔষধ কোম্পানি রিকম্বিনেট ডিএনএ প্রযুক্তি 

সফলভাবে প্রয়োগ করে বাণিজ্যিক সুবিধা সুবিধাদি গ্রহণ করছে। উদাহরণস্বরূপ-মানব দেহের ইনসুলিন তৈরির জিনকে ব্যাকটেরিয়া কষে প্রবিষ্ট করে বাণিজ্যিকভাবে ইনসুলিন তৈরি করা হচ্ছে। তাছাড়া রিকম্বিনেট ডিএনএ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিজাত ফসল এবং উদ্ভিদের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। এসব জাতকে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ বলে। 

১৯৭২ সালে Paul Borg বানরের ভাইরাস SV40 ও lambda virus এর ডিএনএ অণু তৈরি করেন। ১৯৭১ সালে E.coli ব্যাকটেরিয়ার প্লাসমিডের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স জিন প্রবেশ করানোর মাধ্যমে Herbert Boyer এবং Stanley Cohen সর্বপ্রথম ট্রান্সজেনিক জীব তৈরি করেন।

রিকম্বিনেট DNA প্রযুক্তির ধাপসমূহ

রিকম্বিনের DNA প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে সকল ধাপসমূহ গ্রহণ করতে হয় তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
  • DNA নির্বাচনঃ উদ্ভিদের কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য বহনকারী DNA নির্বাচন করা হয়
  • DNA এর বাহক নির্বাচনঃ নির্বাচিত DNA কে বহন করার জন্য বাহক হিসেবে E.coli কে নির্বাচন করা হয়। এ বাহকের প্লাজমিডকে DNA এর সাথে যুক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ব্যাকটেরিয়ার দেহে সাধারণ জ্ঞানে অনুছাড়াও অতিরিক্ত স্বনিয়ন্ত্রিত বৃত্তাকার যে DNA থাকে তাকে প্লাজমিড বলে।
  • DNA খন্ড কর্তনঃ নির্দিষ্ট রেস্ট্রিকশন এনজাইম ব্যবহার করে নির্বাচিত DNA হতে সুবিধা মত DNA অংশটি কেটে নিতে হয়
  • কর্তনকৃত DNA খন্ড প্রতিস্থাপনঃ কর্তনকৃত DNA খন্ডে লাইগেজ এনজাইম প্রয়োগ করে প্লাজোমিড DNA এর যথাস্থাপনে প্রতিস্থাপন করা হয়। পরিবর্তনকৃত প্লাজমিড DNA কোন কারি ব্যাকটেরিয়াকে ট্রান্সফর্ম ব্যাকটেরিয়া বলে।
  • পোষক দেহে রিকম্বিনেন্ট DNA স্থানান্তরঃ রিকম্বিনেন্ট DNA অনুকে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে পোশক ব্যাকটেরিয়ার দেহে প্রবেশ করানো হয়। এ DNA গ্রহণকারী ব্যাকটেরিয়াকে ট্রান্সফর্ম ব্যাকটেরিয়া বলে।
  • রিকম্বিনেন্ট DNA সংখ্যা বৃদ্ধি ও মূল্যায়নঃ রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ ব্যাকটেরিয়াকে কালচার মিডিয়ামে রেখে সংখ্যা বৃদ্ধি করানো হয়। এ সময় কাঙ্ক্ষিত জিনবাহী প্লাজোমিডো পোষক কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এভাবে পোষকদেহে অধিক রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ সৃষ্টি হয়।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কি এবং রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি কি ও এর ধাপসমূহ গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করলাম যা থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্বন্ধে আমরা জ্ঞান লাভ করতে পারি। এখন আমরা আলোচনা করব জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রাইভেট গুরুত্ব সমূহ এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রায়োগিক গুরুত্ব সমূহ

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কৃষি ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক বেগবান করে থাকে। যেমন-জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে অনুবীক্ষণিক জিভ তথা-ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট অথবা ইনসেক্ট ম্য়ামালিয়ান সেল ইত্যাদি থেকে বাণিজ্যিকভাবে প্রোটিন উৎপাদন করা যায়। কৃষি খাদ্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। নিচে এই সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

কৃষিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রায়োগিক গুরুত্ব সমূহ

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মূল গবেষণা কৃষিতে ঘিরে। এর সাহায্যে Genetically modified crops উৎপন্ন করা হয় যা উচ্চ ফলনশীল, উন্নত জাতের, প্রকৃতি সহনশীল রোগ জীবাণু থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। এক্ষেত্রে কৃষি সম্পদ উন্নয়নে যে ভূমিকা রাখতে পারে সেগুলো হলোঃপরিবেশের বিভিন্ন হুমকি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে যেমন অতিরিক্ত 

শীত সহ্য করা, পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত না হওয়া, ভাইরাস ও ফাংগাল দ্বারা আক্রান্ত না হওয়া ইত্যাদি সক্ষমতা সম্পন্ন উন্নত বীজ উৎপাদন সহ মাটির লবণাক্ততা সহ্য করার মধ্য দিয়ে উন্নত ফসল নিশ্চিত করা।ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করার মাধ্যমে উন্নত কৃষি পণ্য উৎপাদনের পরিবেশ নিশ্চিত করা। সর্ষের গুণগত মান বৃদ্ধি করা ও অধিক ফলনশীল 

শস্য উৎপাদন করা।যেমন-Amflora potato.খরা বৃষ্টি সহনশীল ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন স্বল্প সেচের প্রয়োজন হয় এমন সর্ষের জাত উদ্ভাবন করা।উপর্যুক্ত সবগুলো কার্যক্রময় উন্নত কৃষি সম্পর্কে নিশ্চিত করে বিধায় কৃষি সম্পদ উন্নয়নে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।

প্রাণী সম্পদ উন্নয়নে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব সমূহ

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে মানুষের প্রয়োজন মেটাতে প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে এর প্রায়োগী গুরুত্ব সমূহ হলোঃজেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে উন্নত প্রজাতির গরু উৎপাদন কিংবা সাধারণ গরুকে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে জেনেটিক্যাল মডিফাই করে অধিক মোটাতাজা করে তোলা যায়। এ ধরনের গরু গুলো অধিক মানুষের চাহিদা মেটানোর 

পাশাপাশি অধিক দুধ প্রদানেও সক্ষম হয়ে থাকে।বাংলাদেশের জেনেটিক বিজ্ঞানীগণ মহিষের জিনতত্ত্ব বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে এর জীবন রহস্য উদঘাটনে সফল হয়েছেন। এর ফলে এখন উন্নত প্রজাতির মহীশ উৎপাদন সম্ভব যা আমাদের কৃষি কাজে ব্যাপক সহায়তা হতে পারে। আমাদের দুগ্ধের চাহিদা মেটাতেও এ ধরনের মহিষ কার্যকর হতে পারে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিসীম নিম্নে এ ব্যবহার গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ গবেষণা তথ্য ও ফলাফল গবেষকদের মধ্যে আদান-প্রদান ও মতবিনিময়ের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহৃত হয়।
  • বিভিন্ন প্রাণীর জিনের তথ্য এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল সংরক্ষণ করার জন্য ডেটাবেজ ব্যবহৃত হয়।
  • এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধাপে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বিশেষ জটিল সিস্টেম ব্যবহৃত হয়।
  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রক্রিয়ায় গবেষণার জন্য কম্পিউটার শিমুলেশন ব্যবহার হতে পারে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যবহার

বর্তমান বিশ্বে বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন, পরিবেশ রক্ষা সহ মানব জীবনের নানা চাহিদা মেটাতে কাজ করছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি। মেডিকেল সায়েন্স, ফার্মাসিউটিক্যালস ও কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রিজ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন, এনজাইম ও হরমোন উৎপাদনে এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে 

নিচে সংক্ষেপে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যবহার আলোচনা করা হলোঃ
  • ইনসুলিন তৈরিঃ মানব দেহের ইনসুলিন তৈরির জিনকে ব্যাকটেরিয়া কোষে প্রবিষ্ট করে বাণিজ্যিকভাবে ইনসুলিন উৎপাদন হলো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সবচেয়ে বড় সুফল। ইনসুলিন ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজন হয়।
  • উন্নত মানের ফসল উৎপাদনঃ ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে যেমন- সয়াবি, ভুট্টা, তুলা, তেলবীজ, টমেটো, পেঁপে ইত্যাদির জিন বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে এগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি, পোকামাকড় ও অন্যান্য উদ্ভিদ নাশক ছত্রাক ও ভাইরাস প্রতিরোধ করা যাচ্ছে। জেনেটিক্যাল রূপান্তরিত ফসল অধিক খরা ও ঠান্ডা সহ্য করতে পারে।
  • রোগের চিকিৎসাঃ জিম থেরাপি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি সুফল। জিম থেরাপির মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা এবং ত্রুটিপূর্ণভাবে জিন পরিবর্তন করে রোগীকে সুস্থ করে তোলা যায়।
  • ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদনঃ নির্দিষ্ট জিনের ক্লোনিং দ্বারা নতুন অনেক Sophisticated ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
  • টিকা ও জ্বালানি তৈরিঃ জেনেটিক ইপাদন করা হয়।
  • হরমোন তৈরিঃ শিল্পজাত ব্যাকটেরিয়া থেকে উৎপাদিত হিউম্যান গ্রোথ হরমোন বামনত্ব রোধ করে এবং পোড়া ত্বক, ফেটে যাওয়া হার ও খাদ্যনালির আলসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • ভাইরাস নাশকঃ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে Interferon (মানব কোষ থেকে নিঃসৃত এক ধরনের রস) ভাইরাস নাশক (Antivirus) হিসেঞ্জিনিয়ারিং এর ফলে জৈব কারখানায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও এনজাইম উৎপাদন করা যায়। এগুলো দিয়ে প্রচুর সংখ্যায় Tryptophan এর মত টিকা ও সম্পূরক তৈরি করা সম্ভব। তাছাড়া জ্বালানি তৈরিতেও এগুলো ব্যবহৃত হয়।
  • মৎস্য উন্নয়নঃ যেমন মাছের জিন স্থানান্তরের মাধ্যমে মাগুর,কার্প, তেলাপিয়া মাছের আকৃতি অনেক বড় করা সম্ভব হয়েছে।
  • পরিবেশ সুরক্ষাঃ বিজ্ঞানীরা জিন প্রকৌশলীর উপর গবেষণা করে নতুন ব্যাকটেরিয়া তৈরি করেছেন যা পরিবেশ সুরক্ষায় অবদান রাখছে।
  • জেনেটিক ত্রুটি সমূহ নির্ণয়ঃ গর্ভবতী মহিলাদের Fetuses দেখে সন্তানের জেনেটিক ত্রুটি সমূহ নির্ণয় করা যায়। পিতা মাতা ও ডাক্তার মিলে শিশুর জন্মের পূর্বে সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ঝুঁকি সমূহ

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে নতুন প্রজাতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিম্নত্ব ঝুঁকি সমূহ সর্বদা আমলে নিতে হবে নিম্নে এ ঝুঁকি সমূহ গুলো আলোচনা করা হলোঃ
  • প্রাণী ও মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিঃ ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে উৎপাদিত GMO অন্য সমূহ বিষক্রিয়া মুক্ত হতে হবে। এতে কোন প্রকার এলার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান থাকলে তা চিহ্নিত করতে হবে। এর কোয়ালিটি মানুষের খাদ্য উপযোগী না পশু খাদ্য উপযোগী তার নির্দিষ্ট করতে হবে।
  • পরিবেশ ঝুঁকিঃ যদিও পরিবেশের উপর GMO এর প্রভাব নির্ধারণ কঠিন তদুপরি এক্ষেত্রে কতিপয় বিষয়ের ঝুঁকি যথাসম্ভব নির্ধারণ করা আবশ্যক। যেমন- GMO এর মাঝে প্রবেশকৃত জিন বা ওইদিনের প্রোডাক্ট (প্রোটিন) পরিবেশে উন্মুক্ত অবস্থায় কত দিন অবস্থান করতে পারে,GMO অন্যান্য জীব ওই ট্রান্সজেনিকের প্রতি কতটা সংবেদনশীল, ও প্রত্যাশিত জ্বীনের প্রকাশ বা ট্রান্সজিনের স্থায়িত্বের অভাব ঘটছে কিনা এ বিষয় গুলো নির্ধারণ করা জরুরী।
  • চাষ ঝুঁকিঃ এই বিভাগে যে সমস্ত বিষয় খেয়াল রাখতে হয় তা হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশে কাঙ্ক্ষিত জীবের টিকে থাকার সামর্থ্য, পরিবর্তনশীল চাষ খরচ (আগাছা বা পোকামাকড় দমনের ক্ষেত্রে), পুষ্টি মানের পরিবর্তন, ইত্যাদি। এই বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আগাছা বা উৎকৃষ্ট আগাছা সৃষ্টি করার ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করা। কারণ কোন জিএম শস্য যদি কোন সুপারওয়াইড সৃষ্টি করে তবে অন্য ফসলের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।

লেখকের মন্তব্য

পরিশেষে বলা যায় যে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রায়োগিক গুরুত্ব সমূহ ও এর ব্যবহার সম্পর্কে উপরীয়ক্ত আলোচনায় আমরা জানতে পারি এবং এ থেকে অনেক জ্ঞান লাভ করতে পারি। সারা বিশ্বেই এর প্রয়োগ করে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতি সাধন করতে পারছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। 

সবশেষে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যবহারের একটি উদাহরণ দিয়ে এটি শেষ করব। প্রচন্ড ঠান্ডা পরিবেশ টমেটো উৎপাদনের জন্য প্রতিকূল। এ পরিবেশে টমেটোর ফলন কম হয়। অন্যদিকে মাছ অনেক ঠান্ডা পরিবেশের স্বাচ্ছন্দের টিকে থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা কোন জিনের কারণে মাছ অত্যন্ত ঠান্ডা প্রতিরোধ করতে পারে, তা সনাক্ত করে 

জেনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টমেটোতে ফ্রিজ জি কে সন্নিবেশিত করে নতুন আবিষ্কার করেছেন। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সফল প্রয়োগের মাধ্যমে আজকাল মিষ্টি টমেটো উৎপাদন করা যাচ্ছে। বর্তমানে কৃষিতে উন্নত জাতের ফলনের জন্য জেনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে।

এরকম পোস্ট পেতে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু বান্ধব ও পরিচিতদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করুন। আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url