ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্বন্ধে ধারণা এবং প্রাত্যহিক জীবনে এর প্রভাব
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিপ্রিয় পাঠক আপনি কি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্বন্ধে ধারণা এবং প্রাত্যহিক জীবনে
এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেলটি
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্বন্ধে ধারণা এবং প্রাত্যহিক জীবনে এর প্রভাব সম্পর্কে
আলোচনা করা হয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্বন্ধে
ধারণা এবং প্রাত্যহিক জীবনে এর প্রভাব সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্বন্ধে ধারণা এবং প্রাত্যহিক জীবনে এর প্রভাবভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্বন্ধে ধারণা এবং প্রাত্যহিক
জীবনের প্রভাব সম্পর্কে আপনার জ্ঞানকে বর্ধিত করার লক্ষ্যে আর্টিকেলটি শুরু থেকে
শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
আধুনিক বিশ্বজগতের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির একটি অন্যতম আবিষ্কার হল ভার্চুয়াল
রিয়েলিটি বা কল্প বাস্তবতা। আজকে আমার আলোচনার বিষয় হলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
সম্বন্ধে ধারণা এবং প্রাত্যহিক জীবনে এর প্রভাব। প্রথমেই আমাদের জানতে হবে
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি, এর ঘটনা পঞ্জি এবং এর উপাদানসমূহ তারপর আমরা আলোচনা
করব
আরও পড়ুনঃ
ইন্টারনেট ও তার ব্যাবহারের ফলাফল।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয় প্রাত্যহিক জীবনে এর প্রভাব
এবং এর কিছু ইতিবাচক ও নীতিবাচক প্রভাব নিয়ে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি?
প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবে চেতনা উদ্বেগ কারি বিজ্ঞান নির্ভর
কল্পনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অনুভবে বাস্তবতা কিংবা গল্প বাস্তবতা বলে। একে
সংক্ষেপে VR বলা হয়ে থাকে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মূলত কম্পিউটার প্রযুক্তি ও
সিমুলেশন তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এতে ব্যবহৃত সফটওয়্যার এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হলো Vizard,Vrtoolkit,3d studio Max, Maya ইত্যাদি।
"Technology that enables to enter computer generated worlds and interface with
them three dimensionally through sight, sound and touch."
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ত্রি-মাতৃক ইমেজ তৈরির মাধ্যমে অতি অসম্ভব কাজও করা সম্ভব
হয়। কল্পনার পাখায় ভর করে ইচ্ছে করলে চাঁদের মাটিতে হেঁটে আসা, প্রশান্ত
মহাসাগরের গভীরতম অঞ্চলে ঘুরে আসা, মানুষের মস্তিষ্কের নিউরাল সংযোগ এর উপর দিয়ে
হাঁটা কিংবা জুরাসিক পার্কের সেই অতিকায় ডাইনোসরের তারাও খাওয়া যায়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ যেখানে ব্যবহারকারী ওই
পরিবেশে মগ্ন হতে পারে, বাস্তবের অনুকরণে সৃষ্ট দৃশ্য উপভোগ করতে পারে, সেইসাথে
বাস্তবের ন্যায় শ্রবনানুভূতি এবং দৈহিক ও মানসিক ভাবাবেগ, উত্তেজনা অনুভূতি
প্রভৃতির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ঘটনা পঞ্জি
ফরাসি নাট্যকার, কবি, অভিনেতা ও নির্দেশক এন্টনিম আর্চিউড এর ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত
গ্রন্থ 'The Theatre and its Double" এ তিনি সর্বপ্রথম ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে ডেমিয়েন ব্রডরিক এর Thad Judas Mandala নামক
সাইন্স ফিকশেনেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শব্দটি ব্যবহার হয়।আধুনিক ভার্চুয়াল
রিয়েলিটি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয় ১৯৮০ সাল থেকে।
১৯৮৪ সালে হ্যাকার লেনিয়ার তার ভি পি এল রিসার্চ কর্পোরেশন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
নিয়ে গবেষণা শুরু করেন আজকের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির জন্ম দিয়েছে। এই
প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির উপাদান সমূহ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কিছু উপাদান রয়েছে নিম্নে এই উপাদান সমূহ গুলো দেওয়া হলঃ
হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে
- ডেটা গ্লোব
- একটি পূর্ণাঙ্গ বডি সুইট
- উচ্চমানের অডিও ব্যবস্থা
- রিয়েলিটি ইঞ্জিন
- বিভিন্ন ধরনের সেন্সর
- বিভিন্ন শিমুলেশন, মডেলিং ও গ্রাফিক্স সফটওয়্যার ইত্যাদি।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তৈরির উপাদান সমূহ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তৈরির সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
ইফেক্টরঃ হল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তে ব্যবহৃত এক বিশেষ ধরনের ইন্টারফেস ডিভাইস।
হেড মাউন্টেড বা এইচএমডি, ডাটা গ্লোব, পূর্ণাঙ্গ বডি সুইট ইত্যাদি এর উদাহরণ।
রিয়েলিটি সিমুলেটরঃ এটি এক ধরনের হার্ডওয়ার যা ইফেক্টর কে সংবেদনশীল তথ্য
সরবরাহ করে। যেমন-বিভিন্ন ধরনের সেন্সর, ট্রান্সসিউডার, উচ্চমানের অডিও ও ভিডিও
ব্যবস্থা, রিয়েলিটি ইঞ্জিন ইত্যাদি।
এপ্লিকেশনঃ ভার্চুয়াল পরিবেশ ও প্রাসঙ্গিকতা তৈরিতে বিভিন্ন শিমুলেশন সফটওয়্যার
ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- অটোডেস্কের তৈরি ডিভিশন যা সাধারণত ইন্টেল প্রসেসর
সংবলিত পিসিতে ব্যবহৃত হয়।
জিওমেট্রিঃ জিওমেট্রি হল ভার্চুয়াল পরিবেশের বিভিন্ন বস্তুর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য
সম্পর্কিত তথ্যাবলী। যেমন-ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তে ব্যবহৃত ত্রিমাত্রিক মডেলসমূহ
কে অটো ডেস্ক, থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্স বা মায়া প্রভৃতি সফটওয়্যার ব্যবহার করে
তৈরীর পর এই ফাইল গুলোকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তে রেন্ডারিং ও অথরিং এর জন্য
এক্সপোর্ট করা হয়ে থাকে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তিতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তিতে গুরুত্বের সাথে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়
সেগুলো হলঃ
শব্দঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তে শব্দ কোন
বিশেষ স্থান থেকে উৎসারিত এবং ডায়নামিক বা পরিবর্তনশীল বলে মনে হয়। এর কারণ এই
প্রযুক্তিতে ত্রিমাত্রিক শব্দ যুক্ত করা হয় যাতে শব্দের কারণে এক ধরনের পড়া
বাস্তব পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
দৃষ্টিঃ চশমা কিংবা হেলমেট এর মধ্যে ছোট
আকারের পর্দা থাকে এবং বহুমাত্রিক ডিসপ্লে ব্যবহৃত হয়। এতে করে ব্যবহারকারীর
একেবারে বাস্তবের ন্যায় অথচ পড়া বাস্তব দৃশ্য অবলোকনে সক্ষম হয়।
মস্তিষ্কঃ মানুষের মস্তিষ্কের ওপর
পরিচালিত গবেষণা কম্পিউটার জেনারেটেড ওয়ার্ল্ডকে নতুন অবয়ব দিয়েছে, যার
সাহায্যে তথ্যকে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা যায় এবং কৃত্রিমভাবে তার অনুভূতি
মস্তিষ্কের জন্য প্রেরণ করা সম্ভব হয়। এর ফলে মস্তিষ্কে বিভিন্ন কৃত্রিম
স্টিমিলেশন প্রদান করে নানা পড়া বাস্তব দৃশ্যের কৃত্রিম অনুভূতি বাস্তবে ন্যায়
সৃষ্টি করা সম্ভব হয়।
স্পর্শঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের জুতা, গ্লাবস বা শরীরের বিশেষায়িত পোশাক একজন
ব্যক্তিকে কৃত্রিমভাবে প্রকৃত বাস্তবের ন্যায় অবস্থার কাছাকাছি নিয়ে যেতে
সাহায্য করে।
টেলিপ্রেজেন্সঃ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন
কম্পিউটার গ্রাফিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক দূর থেকে কাজ পরিচালনার প্রক্রিয়াকে
টেলি প্রেজেন্স বলা হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে টেলি প্রেজেন্স
প্রক্রিয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যা
উন্নত বিশ্বকে আরো উন্নত করতে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল
রিয়েলিটি বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের জন্য পেশাজীবীদের বাস্তব সম্মত
ও নিরাপদ প্রশিক্ষণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা
প্রয়োজনে
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিভিন্নভাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যার মধ্যে প্রধান
প্রধান ক্ষেত্র গুলো নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো
শিশু শিক্ষায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটিঃ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে শিশুদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে আকর্ষণীয়ভাবে শিক্ষা
প্রদান করা যায়। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের শিশুদের শিক্ষায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির
ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে এবং ডাক্তারদের প্রশিক্ষণঃ
উন্নত বিশ্বে ডাক্তারদের আধুনিক মানে প্রশিক্ষণ প্রদানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
ব্যবহৃত হচ্ছে এমটিএসটি হলো একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সিমুলেটর যা দ্বারা
বাস্তবের নেয় জীবন তো মানুষের ওপর মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অপারেশন করা শেখানো
হয়।
কার ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রেঃ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ড্রাইভিং এর নানা নিয়মকানুন খুব সহজেই আয়ত্ত করা
সম্ভব। বাংলাদেশ পুলিশের মহিলা পুলিশদেরকে ড্রাইভিং শেখানোর জন্য ভার্চুয়াল কার
ব্যবহার করা হয়।
বিমান চালনার প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রেঃ উন্নত
বিশ্বের বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা কিংবা সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বিমান পরিচালনা
প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার করছে। এজন্য ফ্লাইট সিমুলেটর ব্যবহার
করা হয়।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাঃ ট্রাফিক
ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রতিটি যানচালক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান ভার্চুয়াল
রিয়েলিটি ব্যবহার করে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে চালকগণ যদি তাদের যান
চালনায় পারদর্শী হয় তাহলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হয়।
সেনাবাহিনীতে যুদ্ধ প্রশিক্ষণঃ বিভিন্ন
বিরূপ পরিবেশে শত্রূর সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা
হচ্ছে। অত্যাধুনিক অনেক যুদ্ধাস্ত্র সঠিকভাবে ব্যবহার, রাতে যুদ্ধ পরিচালনা,
শত্রুর অবস্থান নির্ণয় ইত্যাদি কাজ নিখুঁতভাবে করার জন্য বর্তমানে অনেক দেশের
সেনাবাহিনীতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ী বাণিজ্যেঃ ব্যবসায়িক কোন
ইনভারমেন্টে ভার্চুয়াল ট্যুর, নতুন কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, কোন প্রডাক্টের
প্রদর্শন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়
অনেক কম মূল্যে কোন প্রোডাক্ট লেভেল পেমেন্ট এবং সার্ভিস প্রদানের জন্য
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হচ্ছে
মহাশূন্য অভিযানঃ মহাশূন্য অভিযানের
প্রতিটি পর্বেই রয়েছে নানা ধরনের ঝুঁকি। প্রস্তুতিপর্বের নানা গুরুত্বপূর্ণ
পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নভোচারীদের কার্যক্রম, নভোযান পরিচালনা সম্পর্কিত যাবতীয়
খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণে তাই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিশেষ স্থান করে
নিয়েছে ।
গেমস তৈরিঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
ব্যবহার করে বর্তমানে বিভিন্ন আকর্ষণীয় গেমস তৈরি করা হচ্ছে। Xbox 360, PS 2 এবং
কম্পিউটারের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেমস রয়েছে।
লিনডেন ল্যাবস লাইফ নিনটেনডো এর Wii এবং ইলেকট্রনিক আর্টস এর The sims ইত্যাদি।
প্রকৌশল ও নগর উন্নয়নেঃ ভার্চুয়াল
রিয়েলিটি প্রকৌশল বিভাগের ত্রিমাত্রিক মডেলিং পরিকল্পনার নকশা দেখার জন্য
ব্যবহার করা হয়। এবং কিভাবে প্রকল্প টি কাজ করবে তা ভালোভাবে বুঝতে পারেন। কোন
ডিজাইন চক্রের শুরুতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয।
শিল্প কারখানায়ঃ শিল্প কারখানার উৎপাদন
প্রক্রিয়ায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও শিমুলেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত
পণ্যের ডিজাইন কিংবা রোগ সমূহের ভার্চুয়ালাইজেশন করা হয়। এর ফলে প্রকৃত উৎপাদন
শুরুর পূর্বে পণ্যের ডিজাইনে কিংবা আউটপুটের যেকোনো ত্রুটি চিহ্নিত করে তার
সংশোধনের মাধ্যমে উৎপাদন সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবেলা করা সম্ভব হয়।
খেলাধুলা ও শরীরচর্চাঃ গলফ,
অ্যাথলেটিক্স, স্কেটিং, সাইক্লিং ইত্যাদি খেলনায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ট্রেনিং
কিট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দক্ষতা পরিমাপ, কৌশল বিশ্লেষণের কাজে ভার্চুয়াল
রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে খেলোয়াড়দের পোশাক। যন্ত্রপাতি এবং কৌশল
নির্ধারণ করা যায়।
বিনোদন ও মিডিয়ার ক্ষেত্রেঃ বিনোদনে
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনে প্রোগ্রামে নতুন বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। ভার্চুয়াল
রিয়েলিটি ব্যবহার করে বেশিরভাগ ইংরেজি চলচ্চিত্র গুলো নিয়মিত হয়েছে। সংগীত, বই
তৈরি, বৈজ্ঞানিক প্রদর্শনী ইত্যাদিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হয় ।
আরও পড়ুনঃ
টিকটক এবং একটি অসুস্থ প্রজন্ম ।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায়ঃ জাদুঘরে
ব্যাপকভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয় যেমন
কোন প্রাচীন গুহা, ভাস্কর্য, ঐতিহাসিক ভবন, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রভৃতি
প্রদর্শনে জাদুঘরে বা বিভিন্ন ঐতিহাসিক গবেষণা তেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার
করা হয়ে থাকে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিবাচক প্রভাব
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব অনেক তবে এই প্রভাবের ফলে আমাদের
জীবনে কিছু ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়।নিম্নে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিবাচক
প্রভাবগুলো দেওয়া হলো-
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে বিভিন্ন কার্যক্রমের যৌক্তিকভাবে খরচ কমিয়ে সাশ্রয়ী উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব।
- বাস্তবায়নের পূর্বে পরিবেশ, পরিস্থিতি ও ফলাফল কে কৃত্রিমভাবে অনুভব করা যায় বিধায় তা অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত, অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয় ঘটনাকে রোধ করতে সক্ষম।
- যেকোনো শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে আকর্ষণীয়, হৃদয়গ্রাহী, বাস্তব সম্মত এবং সর্বোচ্চভাবে নিরাপদ করতে পারে । ঝুঁকিপূর্ণ যে কোন প্রশিক্ষণে দুর্ঘটনা, প্রাণনাস প্রভৃতির সম্ভাবনা শূন্যে নামিয়ে আনে।
- সামরিক প্রশিক্ষণ, মহড়া, কোন উৎপাদিত ধ্বংসাত্মক কোন সময়ের মান যাচাইয়ের পরীক্ষা সমূহ বিষয়টি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হলে তা পরিবেশ দূষণ ও বিপর্যয় রোধ করে।
- ঝুঁকিপূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থাকে সহজ ও ঝুঁকিহীন করে তোলে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির নেতিবাচক প্রভাব
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়ালিটির যেমন ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে তেমনি
পাশাপাশি এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- চড়া দাম ও জটিলতাঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সরঞ্জামীর দাম অনেক চড়া হওয়ার কারণে সাধারণের মধ্যে এর প্রসার এবং জটিলতা নিয়ে বিজ্ঞানীর উদ্বিগ্নতায় আছেন। অনেক সময় এর হ্যান্ডসেটের গতি ব্যবহারকারী স্বাভাবিক গতির সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারে না।
- স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর ব্যবহার মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এটি মানুষের দৃষ্টি শক্তি ও শ্রবণ শক্তির ক্ষতিসাধন করে।
- কল্পনার জগতে বিচরণঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে মানুষ তার কল্পনার রাজ্যে ইচ্ছেমতো বিচরণ করতে পারে। অনেক সময় ধরে কল্পনার জগতে থাকলে বাস্তবতা থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যায়। নেমে আসবে।
- মনুষ্যত্বহীনতাঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তে মানুষ বাস্তবিক এর চেয়ে ভালো পরিবেশ ও মনের মত সঙ্গী পাবে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাপক প্রসারের কারণে মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া হ্রাস পাবে এবং মনুষত্বহীনতা বেড়ে যাবে। ফলে ক্রমে মানব সমাজ বিলুপ্ত হতে থাকবে।
লেখকের মন্তব্য
পরিশেষে বলা যায় যে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এটি এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে কোন
মানুষ বাস্তবে অবস্থান করে কল্পনাকে ছুঁয়ে দেখতে পারে। যেখানে একজন ব্যক্তিকে
কোনরকম শারীরিক ঝুঁকি বা বিপদ ছাড়া বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করে। সম্প্রতি গুগল ও
Lively নামে ভার্চুয়াল চ্যাটিং সার্ভিস চালু করেছে যেখানে একটি ভার্চুয়াল কক্ষ
বা পরিবেশে যে কেউ
তার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে প্রবেশ করতে পারে। আমাদের দেশ
বাংলাদেশেও ১৯৯৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার স্থাপনের উদ্যোগ
নিয়েছিলেন এবং তা তৈরি করে ২০০৪ সাল থেকে দর্শকদের জন্য চালু করা হয় যার নাম
বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার।
এইরকম পোস্ট পেতে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু বান্ধব ও পরিচিতদের সাথে বেশি বেশি
শেয়ার করুন। আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url